Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডুবে যাচ্ছে ১২ হাজার বছরের পুরনো এই শহর!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:১৯ PM
আপডেট: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:১৯ PM

bdmorning Image Preview


টাইগ্রিস নদীরে তীর অবস্থিত হাসানকেইফ এবং ওই নদীর জন্যই তৈরি হচ্ছে ইলিসু হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম। তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ হতে যাচ্ছে ইলিসু। এই বাঁধ তৈরির ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু হাসানকেইফের ৩ হাজার বাসিন্দার মাঝে বাঁধটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

১২ হাজার বছরের পুরনো এই শহরটির মৃত্যু ঘন্টা বেজে গেছে। কয়েক মাসের মাঝেই তা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। একটি বাঁধ নির্মানের জন্য কৃত্রিম লেক তৈরি করা হবে আর তার নিচেই ডুবে যাবে শহরটি।

তুরস্কের হাসানকেইফ শহরের বাসিন্দা রিদভান আয়হান বলেন, ‘আমি কোথায় বড় হয়েছি, আমার নাতি-নাতনিরা তা দেখবে না। তারা যখন জিজ্ঞেস করবে, আপনি কোন শহরের মানুষ? আপনি কোথায় থাকতেন? আমি কী করব? তাদেরকে এই লেকটা দেখাব?’

আয়হানের মতো অনেকেই এই বাঁধের বিপক্ষে। আয়হান ‘কিপ হাসানকেইফ অ্যালাইভ’ নামের একটি প্রতিবাদ শুরু করেন, এতে ওই এলাকার অনেকেই যোগ দিয়েছেন। এই এলাকায় যুগে যুগে আসিরিয়, রোমান, সেলইউক- অনেক জাতি তাদের ছাপ রেখে গেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণ, কয়েক হাজার গুহা।

আয়হান জানান, এখানে প্রতিবার মাটি খুঁড়লেই কিছু না কিছু পাওয়া যায়, এবং প্রাচীন কোনো একটা সভ্যতার নিদর্শন উঠে আসে। এমন প্রাচীন একটি শহর ধ্বংস করে দেওয়া নিঃসন্দেহে অপরাধ।

তবে তুরস্কের সরকার সমালোচনার প্রতিবাদ করে জানিয়েছে, প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণের সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্রেন ও ট্রাকের সাহায্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রাচীন কিছু স্থাপনা। এসবের কারণে হাসানকেইফকে দেখতে শহর নয়, বরং ধ্বংসস্তূপ মনে হচ্ছে। শহরের বাজারে বসে থাকা কসাই জেকি বিলাপ করে বলেন, ‘আর কোনো পর্যটক আসে না এখানে। কী দেখতে আসবে? পা ফেললেই গর্তে পড়ে যাওয়ার ভয়।’

তবে সবাই এই পরিবর্তন নিয়ে অসন্তুষ্ট নয়। হাসানকেইফ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান, আহমেট আকদেনিজ জানান, অনেক বাসিন্দাই এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছে। কারণ সরকার নদীর অন্য পাড়ে ‘নিউ হাসানকেইফ’ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সেখানে থাকবে বড় বড় বাসা এমনকি একটি আধুনিক হাসপাতাল। তবে এই নতুন শহর এখনো নির্মানাধিন। আকদেনিজ মনে করছেন, নতুন শহর আরো পর্যটক টানবে। শুধু তাই নয়, তরুণরা ইতোমধ্যেই এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া শুরু করেছে বলে তিনি দাবি করেন।

এই বছরেই এই বাঁধ নির্মাণ শেষ হতে পারে। আর তা হওয়ার ৩ মাসের মাঝেই ডুবে যাবে হাসানকেইফ।

শহরটি বাসিন্দা সুলেইমান আগলাদি জানান, নিকটবর্তী হালফেটি গ্রামে গিয়েছিলেন তিনি। ইউফ্রেটিস নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে গ্রামটি ২০ বছর ধরে ডুবে আছে। আগলাদি বলেন, ‘আমি দেখতে গিয়েছিলাম আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। আর তা দেখে আমি মাটিতে পড়ে কাঁদা শুরু করি।’

Bootstrap Image Preview