বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলোর একটি হচ্ছে, মধ্য রাতে ঘুমের মধ্যে শরীর ঘেমে যাওয়ার কারণে জেগে ওঠা। ঘুমের মধ্যে অনেক সময় গরম আবহাওয়ার কারণে আপনি রাতে ঘেমে যেতে পারেন, স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরে বেশি কাপড়, কম্বলের কারণে ঘামতে পারেন এমনকি বিছানার কারণেও আপনার শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে। অল্প গরমেই একেবারে অস্থির হয়ে ঘেমে নেয়ে ওঠেন।
অনেক সমস্যার কারণে এই রোগ হতে পারে যেমন- নসিক উত্তেজনা, রাগ, ভয়, উদ্বেগের কারণে ঘাম বেড়ে যেতে পারে। তবে প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে ঘেমে বিছানা ভিজে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব, গা ম্যাজম্যাজ থাকলে সাবধান হওয়া উচিত। ঘামের সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকব্যথা, বুকে চাপ ধরার মতো সমস্যা হলে অবশ্যই হৃদ্রোগ আছে কি না নিশ্চিত হওয়া চাই। আসুন জেনে নিই কেন মানুষ ঘুমের মধ্যে ঘামে।
১) ফোম ম্যাট্রেস ঘুমালে
ম্যাট্রেসটি যদি ক্লোসড সেল পলিইউরেথ্রিন ফোমের তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে তা আপনাকে ঘুমের মাঝে অতিরিক্ত উত্তপ্ত করে দিতে পারে। এই ফোম তৈরি খুব সস্তা, কিন্তু তা ব্যবহার করলে আপনি ঘুমের মাঝে ঘেমে উঠতে পারেন। এই ফোমের বদলে ন্যাচার ল্যাটেক্সে তৈরি ফোম ম্যাট্রেস কিনতে পারেন।
২) বেডরুমে আলো-বাতাসে অভাব
আপনি যে রুমে ঘুমান সেই রুমের বেডরুমে যদি বাতাস চলাচল না করে, কোনো কারণ ঘরটা গরম হয়ে থাকে তাহলেও এই গুমোট পরিবেশে আপনি ঘুমের মাঝে ঘেমে যাবেন। এছাড়া বেশি কম্বল নিয়ে ঘুমানো, বা গরম পোশাক পরে ঘুমাতে গেলে ঘাম হতে পারে। ঘুমের পোশাক ও বিছানার চাদর সুতি হওয়া ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত কম্বল ব্যবহার না করাই উচিত।
৩) মেনোপজের কারণে
নারীদের শরীরে মেনোপজ বা এর আগের কিছুটা সময় বেশি ঘাম হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলায়। মেনোপজের সময়ে ঘাম হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর কারণে যদি ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
৪) স্ট্রেস
স্ট্রেস অনেক সময় ঘুমের মাঝ ঘামের কারণ হতে পারে। এই দুটো সমস্যায় দিনের বেলায় তো ঘাম বেশি হয়ই, রাতেও হতে পারে। আর স্ট্রেসের কারণ দুঃস্বপ্ন দেখে ঘেমে ঘুম ভেঙে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। ঘুমের আগে মেডিটেশন, গরম পানিতে গোসল বা বই পড়ার মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
৫) ওষুধের কারণে ঘাম হতে পারে
কিছু কিছু ওষুধ খেলে ঘাম হতে পারে। তাই হুট করে বেশি ঘাম হতে থাকলে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন। এসব ওষুধের মাঝে আছে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ডায়াবেটিসের ওষুধ ও কিছু হরমোন থেরাপি। এর পাশাপাশি কেমোথেরাপির ওষুধ ও রক্তচাপের ওষুধও এক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে।
৬) আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, মধ্যবয়সী নারীদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে ঘুমের মাঝে ঘাম হওয়া। অন্যান্য লক্ষণ হলো নাক ডাকা, বারবার ঘুম ভাঙা বা অনিদ্রা, দিনে ক্লান্তি, ঘুম থেকে উঠে গলা ব্যথা ও মাথা ব্যথা। আপনারও যদি এ ধরনের উপসর্গ থাকে তাহলে ডাক্তারকে জানানো উচিত।
৭) ঠাণ্ডা বা ভাইরাস জ্বর
শীতকালে জ্বর হয়ে ঘুমের মাঝে ঘাম হওয়াটা বেশ সচরাচর দেখা যায়। সাধারণ ঠাণ্ডা, ভাইরাস বা অন্য কোনো কারণে জ্বর হতে পারে। ফলে ঘুমের মাঝে ঘামে শরীর ভিজে যেতে পারে। শরীর সুস্থ হয়ে এলে ঘাম হওয়াটাও কমে আসবে।
৮) বড় কোনো শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে রাতে ঘাম হওয়া। যেমন অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার, থাইরয়েডের সমস্যা, হৃদরোগ, কিছু স্নায়বিক সমস্যা, হাড়ের সমস্যা এমনকি ক্যান্সার। কিন্তু ঘাম হলেই তারমানে আপনার বড় কোনো অসুখ হয়েছে এমনটা নয়। আপনার শারীরিক সমস্যার লক্ষণগুলো ডাক্তারকে জানান।