Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মাভাবিপ্রবি'তে শিক্ষককে লাঞ্চিতের অভিযোগ, বিচার না পাওয়ায় পদত্যাগপত্র জমা 

শাহরিয়ার রহমান সৈকত, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:২৮ PM
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:৩১ PM

bdmorning Image Preview


টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ কতৃক জোড় করে পরীক্ষা দেওয়ানোর সময় শিক্ষকরা বাঁধা দেয়। এসময় শিক্ষকরা লাঞ্চনার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৪৮জনের পদত্যাগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেয়া হয়। এর মধ্যে- ২জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, ৪জন ডীন, ৪জন প্রভোস্ট, ১৪জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউজ টিউটর, সকল সহকারী প্রক্টরসহ মোট ৪৮ জন।

জানা যায়, রবিবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরেও জোড় করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।

শনিবার (৬ অক্টোবর) ২য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস পরীক্ষায় উন্নিত হতে পারেনি। তার ফলাফল ৪ এর মধ্যে ১.৯৮। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে উন্নীত হতে পারবে।

পরীক্ষায় ফলাফল ১ দিন আগে ঘোষণা করায় এক অধ্যাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতার পক্ষ হয়ে তাকে জোড় পূর্বক পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেয়। বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাঁধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ও উক্ত বিভাগের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মারার উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহাড়া দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়। 

এদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় বিকাল ৪ টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়।

মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্রছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিক থেকে ৩ টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে। 

অর্ডিন্যান্স হল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলাফল পদ্ধতি। 

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে। আমরা সকাল ৯ টায় ছাত্রছাত্রী স্বাক্ষরিত স্বারকলিপি ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর জমা দিব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরপর ছাত্রছাত্রী হলে ফিরে যায়। 

ছাত্র-ছাত্রী চলে যাবার পর ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে বিচার না পাওয়ার কারণে মধ্যেই রাতেই সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। 

অন্যদিকে রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানকে জানায়। পরে সজীব ও সাইদুর ছাত্রী হলের ভিতরে প্রবেশ করে অন্যান্য ছাত্রীদেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়।

এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষককরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি। 

এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

Bootstrap Image Preview