Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

টাকার লোভে পাকিস্তান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪১ AM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪১ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বিশ্বে পাকিস্তানের এখন সবচেয়ে বড় দাতাবন্ধু চীন। ভারতশত্রু দেশটির শিল্প, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে বেইজিং।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড ও রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নির্মাণের কাজ চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে প্রকল্পটি। এই প্রকল্পে বেইজিংয়ের বিনিয়োগ ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

দেশভাগ পরবর্তী ৭০ বছরের ইতিহাসে এমন বৃহৎ প্রকল্প দেখেনি ইসলামাবাদ। চীনের এই কাড়ি কাড়ি টাকার গন্ধ পেয়েছেন পাক রাজনীতিকরা। চাঙ্গা হয়ে উঠছে আঞ্চলিক রাজনীতি।

মূলত সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচি ও সবচেয়ে বড় প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক বলয়। এ দুটি বলয়ই পালাক্রমে চীন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে।

পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগ আসতে থাকে ৯০-এর দশকের শেষের দিকে। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আমলেই চীনের পক্ষ থেকে প্রথম বড় কোনো বিনিয়োগ আসে।

আরব সাগর উপকূলের প্রাচীন গোয়াদর সমুদ্রবন্দর নতুন করে নির্মাণের লক্ষ্যে ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিস্বাক্ষর হয়। কিন্তু বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লাহোরভিত্তিক রাজনীতিক নওয়াজ ও তার অনুগত ব্যবসায়ী শ্রেণী এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্ম নিলেও মোশাররফ বেড়ে উঠেছেন করাচিতে। ১৯৯৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে নওয়াজকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং প্রেসিডেন্ট হন। তার অধীনেই ২০০২ সালে বন্দরের কাজ শুরু হয়ে ২০০৭ সালে শেষ হয়।

কিন্তু বেইজিংয়ের অর্থায়নে এবং চীনা কোম্পানির নির্মিত হলেও বন্দরের চাবি বা নিয়ন্ত্রণ তাদের কোনো কোম্পানিকে দেয়া হয়নি। তার বদলে বন্দরের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় সিঙ্গপুর পোর্ট অথোরিটি পিএসএ কর্পোরেশনের স্থানীয় প্রতিনিধি ও ব্যবসায় অংশীদার একটি কোম্পানিকে।

চীনকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে। পশ্চিমা বিশ্বের বাজার ও শুল্কমুক্ত বড় বাণিজ্য সুবিধাও পায় তারা। শুধু মোশাররফের আমলেই নয়, ৬০-এর দশক থেকেই বিভিন্ন সামরিক সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে এই গোষ্ঠীটি।

করাচিভিত্তিক কোম্পানিটির মালিক মোশাররফের ঘনিষ্ঠ ধনকুবের আকিল করিম ধেধি। স্বৈরশাসক মোশাররফের শাসনামলে অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সব বাণিজ্যে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল করাচিভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর।

ইমরানের সরকার ও মন্ত্রিসভায়ও জায়গা করে নিয়েছে তারা। ইমরান সরকারের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও পোশাক শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা হয়েছেন আবদুল রাজাক দাউদ। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে বৃহৎ ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান দাউদ হারকিউলিসের কর্ণধার।

চলতি বছরেই পাকিস্তানে সরকার গঠন করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান। শোনা যায়, সেনাবাহিনী ও করাচিভিত্তিক ব্যবসায়ীদের টাকায় ও সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। ফলে প্রায় ১১ বছর করাচিভিত্তিক সেই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

পাকিস্তান অর্থনীতির চালিকাশক্তি ‘২২ শীর্ষ পরিবারের’ একজন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আসাদ ওমর। দাউদ পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশনের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি।

তারাই চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরসহ সব ধরনের বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছেন। নিয়োগ পাওয়ার পরই এক সাক্ষাৎকারে দাউদ আগের সরকারগুলোর বাণিজ্যনীতির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।

Bootstrap Image Preview