তার অবয়বে দুরন্তপনার ছাপ। মায়াবী চেহারা। ছিপছিপে গড়ন। সবসময়ই পরিবারের সদস্যদের মাতিয়ে রাখে সে। আদর করে সবাই তাকে ‘ছোট্ট পরী’ বলে ডাকেন। বয়স মাত্র ১৪ বছর। লন্ডনের ওলভারহ্যাম্পটনের স্কুলের ছাত্রী সে। কিন্তু পাষণ্ড এক ঝড় যেন নিমিশেই শেষ করে দিল তার দুরন্ত চোখের সব স্বপ্ন। এ যে পাশবিকতাকেও হার মানানোর মতো এক নৃশংস গল্প।
ফুটফুটে গড়নের এই কিশোরীর নাম ভিক্টোরিয়া সোকোলোভা তরী। লিথুয়ানিয়ান বংশোদ্ভূত। লন্ডনের ওলভারহ্যাম্পটনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করতো সে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিলে ওলভারহ্যাম্পটনের ওয়েস্ট পার্ক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাসা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে এই পার্কের অবস্থান।
মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যার নেপথ্যের কারণ জানতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রথমেই পুলিশের সন্দেহ হয়; তরীকে হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। সেই অনুযায়ী তারা এক কিশোরকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, পাশবিকতার শিকার হয়েছে ওই কিশোরীর মরদেহ। আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে ওই কিশোর বলছে, হত্যার পর নিথর ভিক্টোরিয়াকে ধর্ষণ করেছে সে।
সোমবার ওই কিশোরকে ওলভারহ্যাম্পটনের আদালতে তোলা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যার পর কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে আনা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের সব স্বপ্ন চূড়মার হয়ে গেছে। তাদের ভাষায় ‘ছোট পরী’ ভিক্টোরিয়া ছিল তাদের রঙিন স্বপ্ন।
ভিক্টোরিয়া নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বন্ধুরা। অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা গঠন করেছে ‘তরী ফাউন্ডেশন।’ ফেসবুকে দেয়া এক গ্রুপ পোস্টে তরীর সব বন্ধু এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে, আমরা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। তার বাবা-মাকে সহায়তা করার জন্য আমরা অর্থ সংগ্রহ করছি। শোক জানাতে আমরা মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করবো।
‘আপনারা এগিয়ে এলে এটা ভালো হবে। শান্তিতে ঘুমাও তরী। আমরা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।’ বুধবার ওলভারহ্যাম্পটনের চার পুরুষ ও আট নারী বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারবিভাগে মামলার শুনানি শুরু হবে। বিচারক জোনাথন রিস কিউসি বলেছেন, মামলায় আদালতে ডিএনএর আলামত উপস্থাপন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরীর মা এবং সৎ বাবার জবানবন্দি নেয়া হবে।