Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

থামছে না তামাকের আগ্রাসন, উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি

আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৬ PM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৬ PM

bdmorning Image Preview


খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলীসহ বিভিন্ন স্থানে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষে বাংলাদেশ প্রান্তরে প্রতিবছর বাড়ছে তামাকের চাষ। এতে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিসহ আশপাশের বায়ু দূষিত হয়ে পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। 

সিগারেট কোম্পানী ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো'র কুটকৌশলের কাছে হেরে গিয়ে কৃষকেরা ফসলি উর্বর ধানী জমিতে তামাক চাষ করছে। সরকারি বিধি নিষেধ না থাকায় ফসলি জমিতে কৃষিজাত শস্য ফলানো বাদ দিয়ে চাষিরা তামাক চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। এত করে কমছে কৃষি জমি ও ফসলের উৎপাদন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আমতলী, বর্ণাল, তবলছড়ি ইউনিয়নস্থ,খন্ড খন্ড বিভিন্ন এলাকাসহ বিস্তীর্ণ প্রায় ১'শ একর জমিতে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ করা হচ্ছে। এসব খেতে পোকা দমনে ছিটানো হয় ক্ষতিকর কীটনাশক। এসব এলাকার পাশের লোকালয়ে রয়েছে মথুমগপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফলে কোমলমতি শিশুদের প্রতি ক্ষতিকর তামাক চাষের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে।

উপজেলার আমতলী এলাকার কৃষক মো: আবুল কাশেম ও রফিক জানান, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো'র লোভনীয় অফারে আমরা এ তামাক চাষে আগ্রহী হই। এ কোম্পানি জমিনুযায়ী অগ্রিম লোন দেয়। বীজ, ঔষধের যাবতীয় ব্যয় কোম্পানি বহন করে এসব জমিতে হাইব্রিড তামাক উৎপাদন করা হয়। কোম্পানির সাথে আমরা সকলে বিভিন্ন শর্তে লিখিত চুক্তিবদ্ধ হয়ে তামাক চাষ করি, তবে কোম্পানি আমাদের সহিত প্রতারণা করেন না চুক্তিনুযায়ী আমাদের সকল বকেয়া পরিশোধসহ চুক্তির শর্ত পালনকারীদের বকশিস প্রদান করেন।

তাছাড়া এক একর জমিতে তামাক চাষ করে আমাদের আয় হয় দেড় লাখ টাকা কিন্তু একই পরিমাণ জমিতে ধান ও সবজি চাষ করলে ৩০ হাজারের বেশি আয় হয় না।

আমতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সন্জয় শর্মা বলেন, তামাক চাষের যে ক্ষতিকর দিক সেটা আমরা সকলে অবগত রয়েছি। তবে এ চাষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে দেওয়া ঠিক নয়। তামাক চাষ বন্ধে বিকল্প চাষ হিসেবে ভুট্রা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখাতে হবে। যথাযথ কৃষি নিয়ম মেনে ভুট্রা চাষ করলে তামাক চাষের তুলনায় আরো বেশি লাভবান হওয়া যায়।

আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি'র আজীবন সদস্য এবি এম ফরহাদ বলেন, ইতিপূর্বে আমতলীতে শীতকালীন অনেক শাকসবজি উৎপাদন করা হতো এসব জমিতে তামাক চাষ করার ফলে শাকসবজি উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, লাভ বেশি হওয়ার কারণে কৃষক এই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। একদিকে বেশি লাভের আশায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে তামাক পুড়ানোর জন্য পুড়ানো হচ্ছে লাকড়ি যা পরিবেশ দূষণে আরেক মারাত্মক মাত্রা যোগ হলো।

উক্ত কোম্পানি'র এরিয়া সুপারভাইজার আব্দুল কাদের জানায়, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তামাক চাষ শুরু হয়। ইতি মধ্যে তামাক চাষিরা বীজতলা থেকে তামাকের চারা জমিতে রোপনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তামাক অন্যান্য ফসলের মতোই একটি ফসল এতে পরিবেশের ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই, আমরা এ চাষে কৃষকদের উৎসাহ করতে বিনা সুদে লোন দিয়ে থাকি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম মিয়া বলেন, তামাক চাষ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক  ঝুঁকিপূর্ণ। এ চাষের ফলে জমির উর্বর শক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। সরকারিভাবে তামাক চাষ নিষিদ্ধ না করায় আমরা কৃষকদের চাপ দিতে পারি না। কিন্তু মাঠে ও বিভিন্ন সভায় তামাক চাষ না করতে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তামাক চাষের বিকল্প চাষ হিসেবে ভুট্রা, সরিষা, সবজি ও ডাল চাষ করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

Bootstrap Image Preview