বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ঘোষিত বিএএস- ড.এম ইন্নাস আলী মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ পেয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসাধারণ অবদান রাখা একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সম্প্রতি বিজ্ঞান একাডেমির সেক্রেটারি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদের সই করা এক চিঠিতে ড. আনোয়ার হোসেনের এই স্বর্ণপদক প্রাপ্তির কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনার চমৎকার কাজ, গবেষণা এবং সর্বোপরি এ দেশে জীববিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আপনার অবদানের প্রমাণ স্বরূপ এ মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। আমাদের হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
বিজ্ঞান একাডেমির সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সুবিধাজনক একটি সময়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ স্বর্ণ পদক প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি হচ্ছে এ দেশের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের সর্ববৃহৎ শিক্ষায়তন ফোরাম। দেশে বিজ্ঞান উন্নয়ন এবং গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদা ছিলেন এ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ড. মো: আনোয়ার হোসেন মলিকুলার মাইক্রোবায়াল জেনেটিকস, বায়োইনফরমেটিকস এবং ভ্যাকসিন উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। ১৯৮৪ সাল থেকেই তিনি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। সেই থেকেই তাঁর গবেষণার হাতেখড়ি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে তিনি বায়োটেক রিসার্চের অংশ হিসেবে বিএসএল-১ ও বিএসএল-২ নামের দু'টি অত্যাধুনিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেনোমিক প্রযুক্তি ও বায়োইনফরমেটিকস গবেষণায় তাঁকে বাংলাদেশের পথিকৃৎ বলা হয়। উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) সহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে তিনি ১.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের গবেষণা অনুদান পেয়েছেন।
বর্তমান তাঁর গবেষণা দলে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, তিনজন প্রভাষক, বেশ কয়েকজন পিএইচডি, এমফিল এবং এমএস-এর শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই গবেষণাগার থেকেই ড. মো: আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (খুরা রোগ, এফএমডি) ভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির সামনে এই খুরা রোগের টিকা আবিস্কারের ঘোষণা দেন। এছাড়া বর্তমানে তাঁর গবেষণারে সালমোনেলোসিস ব্যাকটেরিয়া ও আর্সেনিক প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা অব্যহত রয়েছে।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে তাঁর ৮১টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। তাঁর একক ও উদ্ভাবনী আবিস্কারের জন্য তিনি ২০১১ সালে ইউজিসির শ্রেষ্ঠ গবেষক হিসেবে পুরস্কৃত হন। বর্তমানে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির বিখ্যাত গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক রয়েছে। দেশ-বিদেশের কয়েকটি হাই-ইনডেস্ক সাময়িকীর সম্পাদনা পরিষদে রয়েছেন বাংলাদেশের এই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ও গবেষক।