যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী সিরিয়ায় ফসফরাস বোমা নিক্ষেপ করেছে। এমনটাই দাবি করছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির স্যাভচেঙ্কো জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় শনিবার সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আজ-জোর প্রদেশে ওই বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দের আজ-জোর এ অন্তত দুটি বিমান দিয়ে হামলাটি চালিয়েছে। হামলায় মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে তা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
এর আগে রুশ জেনারেল ভ্লাদিমির সাভচেঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এফ-১৫ বিমান থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সিরিয়ার দিয়ার আল-জাওয়ার প্রদেশের হাজিন এলাকায় অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টিকারী ফসফরাস বোমা হামলা চালানো হয়েছে।’ এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, দুটি মার্কিন এফ-১৫ যুদ্ধবিমান শনিবার হাজিন শহরে ফসফরাস বোমা হামলা চালায়। হামলার পর সেখানে বিশালাকার অগ্নিকুন্ড দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সেখানে কর্মরত রুশ লেফটেনেন্ট জেনারেল ভ্লাদিমির শাবচেংকো।
পেন্টাগনের মুখপাত্র কমান্ডার শন রবার্টসন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ইউনিটের কাছে কোনো ফসফরাস বোমা নেই।
তবে রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে একে নির্লজ্জ মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছিল। তবে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট এর আগে সিরিয়ায় সাদা ফসফরাস বোমা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, সাধারণ জনগণ ও বৈধ সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে ফসফরাস বোমা হামলা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত মার্চে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাশিয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত বোমা হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
গত শনিবার থেকে সিরিয়ার সর্বশেষ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ইদলিবে ফের হামলা শুরু করেছে আসাদ বাহিনী ও রাশিয়া। কয়েকদিন আগে ইদলিবে সম্ভাব্য সামরিক হামলা বন্ধে তেহরানে বৈঠক করেন ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু সে আলোচনা সফল না হওয়ায় ইদলিবে পুনরায় হামলা শুরু করেছে তারা।
সেখানকার বাসিন্দা ও উদ্ধারকারীরা বলছেন, সিরীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে দক্ষিণ ইদলিবের গ্রামগুলোতে ব্যারেল বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে দুই শিশু প্রাণ হারিয়েছে। তবে সিরীয় সেনাবাহিনী ব্যারেল বোমা ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে।
কিন্তু জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের মতো যথেষ্ট প্রমাণাদি তাদের কাছে রয়েছে। এদিকে, ইদলিবের পাশের প্রদেশ হামায় বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে রাশিয়ার জেট থেকে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঘনবসতিপূর্ণ ইদলিব প্রদেশে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। তাদের অনেকেই সিরিয়ার অন্যান্য এলাকার বাসিন্দা।
ওই এলাকার সংঘাত থেকে বাঁচতে তারা ইদলিবে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে ইদলিবে সামরিক হামলার কারণে সর্বোচ্চ আট লাখ মানুষ গৃহহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছে আরো কয়েক লাখ মানুষ।