Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নাসির ইউ মাহমুদকে গ্রেফতারের বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১, ০১:৪০ AM আপডেট: ১৪ জুন ২০২১, ০১:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তবে পরীমণি পুলিশে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে দেওয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাস নজরে আসার পর পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রোববার (১৩ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টকে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘পরীমণির ফেসবুক স্ট্যাটাস পুলিশ সদরদফতরের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’

পুলিশ সদরদফতরের একজন পুলিশ সুপার (এসপি) সমমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘পরীমণির অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।’

সদা হাস্যোজ্জ্বল পরীমনি আজ সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন। এর কিছু সময় পর একটি সংবাদ সম্মেলনে কান্না কান্না কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমার গায়ে যখন হাত তোলা হয় তখন বারবার বলেছিল- আমাকে তিন টুকরো করে ভাসিয়ে দেবে।

পরীমণি আরও বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।

কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে সবসময় থাকেন এবং নাচ করেন… ছেলেটি ছিলেন। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে জিমি ও পাঁচজনের একটি গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।

তাকে জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। তার সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে (একসঙ্গে নাচ করেন) মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।

নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি।

সুইসাইড নিয়ে পরীমনি জোর গলায় বলেন, ‘আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে নই। আমি যদি মারা যাই, ধরে নেবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারিনা। আমি আমার বিচার নিয়েই মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে আমি এর বিচার চাই। আর আমি যদি মরে যাই আপনার বিচার করবেন।’
 

এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন পরীমনি, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে ওই স্ট্যাটাসের শুরুতে এ নায়িকা লেখেন, ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’

স্ট্যাটাসের পর পর গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, আপনারা বাসায় আসেন। সব বলবো। ফোনে এসব বলা ঠিক হবে না।

এরপরই গণমাধ্যম কর্মীরা তার বাসায় গিয়ে জমা হন।

মুঠোফোনে পরীমনি জানিয়েছিলেন, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও অভিযোগ নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। যাদেরকে পেয়েছেন সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে ‘দেখছি’ বলে চুপ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

পরীমনির এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানও।

এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন,  ‘পরীমনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’

তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পরীমনি কতটা ভুক্তোভোগী হয়েছেন বা ঘটনাটি কি সে বিষয়ে কিছু জানাননি জায়েদ খান।  

তবে এটাই স্পষ্ট যে, জায়েদ খানসহ শিল্পী সমিতির কেউ কেউ ঘটনার প্রসঙ্গে অবগত আছেন।

এদিকে পরীমণির স্ট্যাটাস সম্পর্কে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা  বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব।’

এর আগে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেওয়া পরীমনির স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।

পোস্টের পর ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে প্রায় ৫০ হাজার লাইক জমা পড়ে তাতে। মন্তব্য জমা পড়ে ১৪ হাজারের বেশি। শেয়ার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার।

সিনেপ্রেমীদের প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ কেন এমন স্ট্যাটাস দিলেন পরীমনি? কে বা কারা নির্যাতন করেছেন এই চিত্রনায়িকাকে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব কেন?

রোববার রাতে ফেসবুকে লেখা ওই স্ট্যাটাসে পরীমনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’

পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’

 

Bootstrap Image Preview