Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরীমণিকে নারকীয় নির্যাতনকারী শিল্পপতি নাসির ইউ মাহমুদের পরিচয় প্রকাশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১, ০১:২৩ AM আপডেট: ১৪ জুন ২০২১, ০১:২৩ AM

bdmorning Image Preview
পরীমণি এবং শিল্পপতি নাসির ইউ মাহমু


অবশেষে মুখ খুললেন পরীমণি। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার দুই ঘণ্টার মাথায় জানালেন তাকে হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম। জানান, তার ওপর সেদিন রাতে নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছেন নাসির ইউ মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি।

নিজের বাসায় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে এক সংবাদসম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তারিত জানান।

তিনি জানান, ঘটনার মূল হোতা নাসির ইউ মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। উত্তরা বোট ক্লাব নামে এক ক্লাবের সাবেক সভাপতি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে যান পরীমনি। সেদিন চারজন মদ্যপ ব্যক্তি পরীমনিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন। এক পর্যায়ে একজন তাকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টাও করে তারা।  

পরী বলেন, বুধবার রাত ১২ টার দিকে অমি নামের একজন পরিচিত ব্যক্তির সাথে উত্তরা বোট ক্লাবে যাই। সেখানে আর কেউ ছিল না। তবে পরে সেখানে নাসির ইউ মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি আসে। তিনি নিজেকে উত্তরা বোট ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিচয় দেন।

এমন তথ্য দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পরীমনি। সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে অন্য কক্ষে চলে যান।

কে এই নাসির ইউ মাহমুদে? 

২০১৫ সালে উত্তরা ক্লাবের সভাপতি পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন শিল্পপতি নাসির ইউ মাহমুদ। নির্বাচনে নাসির ইউ মাহমুদ ৬৭২ ভোট পান। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা বোট ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।

এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন পরীমনি, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে ওই স্ট্যাটাসের শুরুতে এ নায়িকা লেখেন, ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’

স্ট্যাটাসের পর পর গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, আপনারা বাসায় আসেন। সব বলবো। ফোনে এসব বলা ঠিক হবে না।

এরপরই গণমাধ্যম কর্মীরা তার বাসায় গিয়ে জমা হন।

মুঠোফোনে পরীমনি জানিয়েছিলেন, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও অভিযোগ নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। যাদেরকে পেয়েছেন সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে ‘দেখছি’ বলে চুপ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

পরীমনির এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানও।

এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন,  ‘পরীমণি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’

তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পরীমনি কতটা ভুক্তোভোগী হয়েছেন বা ঘটনাটি কি সে বিষয়ে কিছু জানাননি জায়েদ খান।  

তবে এটাই স্পষ্ট যে, জায়েদ খানসহ শিল্পী সমিতির কেউ কেউ ঘটনার প্রসঙ্গে অবগত আছেন।

এদিকে পরীমণির স্ট্যাটাস সম্পর্কে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা  বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব।’

রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেওয়া পরীমনির স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।

পোস্টের পর ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে প্রায় ৫০ হাজার লাইক জমা পড়েছে তাতে। মন্তব্য জমা পড়েছে ১৪ হাজারের বেশি। শেয়ার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার।

সিনেপ্রেমীদের প্রশ্ন, হঠাৎ কেন এমন স্ট্যাটাস দিলেন পরীমনি? কে বা কারা নির্যাতন করেছেন এই চিত্রনায়িকাকে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব কেন?

রোববার রাতে ফেসবুকে লেখা ওই স্ট্যাটাসে পরীমনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’

পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’

Bootstrap Image Preview