Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বদলে যাচ্ছে দর্শকের রুচি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:০০ PM আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:০০ PM

bdmorning Image Preview


'দর্শক খুব বোকা। তাদের যা দেখানো হবে, তাই দেখবে'- দেশের সাধারণ দর্শকদের নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করে আসছেন নির্মাতারা। দর্শককে নিয়ে নির্মাতাদের এমন ধারণার কারণেই আজ ডুবতে বসেছে দেশের নাটক-সিনেমা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি দর্শকের রুচিতেও বেশ একটা রদবদল ঘটেছে। দর্শক এখন অনেক আধুনিক ও রুচিশীল। বিশ্বায়নের এই যুগে দর্শক ঘরে বসেই নিজের মনের মতো করে বিনোদনের সন্ধান করছেন, মনের খোরাক মেটাচ্ছেন।

যাচ্ছেতাই দিয়ে দর্শককে সিনেমাহলমুখী করার সময় এখন শেষ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বেশিরভাগ দর্শক। তারা জানিয়েছেন, তিনঘণ্টা সময় ব্যয় করে পকেটের টাকা খরচ করে সস্তা নির্মাণ, দুর্বল অভিনয়, কৌতুকের নামে ভাঁড়ামো সর্বস্ব গতানুগতিক চিত্রায়ন চান না তারা। তারা চান নতুন কিছু। যার দরুন একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়ছে নাটক ও চলচ্চিত্র।

ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করলে চলতি বছরটিকে চলচ্চিত্রের বিপর্যয়ের বছর বলে উলেস্নখ করেছেন সিনেমাবোদ্ধারা। সংখ্যার দিক থেকেও বিগত বছরগুলোর চেয়ে কম ছবি মুক্তি পেয়েছে এবার। সব মিলিয়ে প্রায় চলিস্নশটি ছবি মুক্তি পেয়েছে এবার। বছরের যাত্রাই শুরু হয়েছে ব্যর্থতা দিয়ে।

একমাত্র রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিব খান-বুবলী অভিনীত 'পাসওয়ার্ড' ছাড়া কোনো ছবিই ব্যবসা করতে পারেনি। যদিও ছবিটি নিয়েও নকলের অভিযোগ উঠে। 'পাসওয়ার্ড' ছবির পর অনেক ছবি মুক্তি পেলেও প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সেসব ছবি।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া 'প্রেম চোর' ছবিটি মুক্তির প্রথম দিনেই দর্শক খরায় পড়ে যায়। অনেক সিনেমাহল থেকে নামিয়েও দেয়া হয়েছে ছবিটিকে। ধারণা করা হচ্ছে, বছরের সবচেয়ে ফ্লপ ছবি হবে 'প্রেম চোর'।

এদিকে দর্শক কমে যাওয়ায় চলতি বছরেও ভেঙে ফেলা হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি নামকরা সিনেমাহল। পাশাপাশি রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলসহ অনেক সিনেমাহল কর্তৃপক্ষই কমিয়েছেন টিকিটের মূল্য। তারপরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

অনেক নির্মাতাই ছবির কাজ শেষ করেও কেবলমাত্র দর্শক-খরার ভয়ে ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন পেশাজীবী দর্শকের সঙ্গে। বিভিন্ন দর্শকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, এসময়ের চলচ্চিত্রে দর্শক বিনোদন পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, 'এক সময়ে আমাদের চলচ্চিত্রের সুনাম ছিল। প্রেক্ষাগৃহে নতুন ছবি মৃুক্তি পেলে দর্শক না দেখে শান্তি পেতেন না। বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা হলে যেতেন ছবি দেখতে। সেসব ছবিতে প্রাণ ছিল। সময়ের প্রেক্ষাপটে দর্শক যা চাইতেন তাই পেতেন। কিন্তু এখন চলচ্চিত্রে তা নেই।

নির্মাতারা নিজেদের ইচ্ছেমত নির্মাণ করছেন। দর্শকদের চাহিদানুযায়ী ছবি নির্মাণ করতে পারছেন না। গতানুগতিক গল্পের ছবিই নির্মাণ হচ্ছে। রোমান্টিক গল্পের ছড়াছড়িতেও নেই রোমান্টিকতা। গল্পের দ্বন্দ্বে কোনো উত্তেজনা নেই। অ্যাকশন দৃশ্যেও টানটান উত্তেজনার অভাব। দুর্দান্ত সংলাপ ও পর্দা কাঁপানো অভিনয় দেখা যায় না। ঘুরেফিরে একই লোকেশন ও অযথাই বহির্দেশে দৃশ্যায়ন। এক ধরনের গোঁজামিল।'

ইডেন কলেজের ছাত্রী সানু বলেন, 'দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তারা নতুনের সঙ্গে নতুনত্ব চান। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের নির্মাতারা নতুনত্বের ছোঁয়ায় তেমন কিছু করতে পারছেন না। শুধু নাচ, গান ও অ্যাকশনেই ছবি হয় না। এসব থাকবে কিন্তু এর মধ্যে কিছু ভ্যারিয়েশন আনতে হবে।

এখনকার গল্পের নাটক-সিনেমা দেখতে বসলে একটু দেখেই পরের অংশ বলে দেয়া যায়।' এই বিশ্বায়নের যুগে আরও মেধাবী নির্মাতাদের এগিয়ে আসা উচিত বলেও জানিয়েছেন অনেক দর্শক।

Bootstrap Image Preview