খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহ সব সময় বেশি। আর তারকাখ্যাত হলে তো কথায় নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেই জানার আগ্রহ মিটাচ্ছে ভক্তরা। আর তাই তারকারাও ভক্তদের কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নিজেদের প্রতিদিনকার জীবন-যাপনের অনেক কিছুই তারা ভক্তদের জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। আর এতে অনেক সময় ভক্তরা যেমন বাহ বাহ দেয়, তারকারা যেমন প্রশংসা কুড়ায়। তেমনি কখনও কখনও বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও পড়তে হয় তারকাদের। এই যেমন মডেল অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুলের কথায় বলা যায়।
সাম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পিয়াকে উত্যক্ত করতে এসে উল্টো পিয়ার হাতে ধরাশয়ী হয়েছে সেই উত্যক্তকারী। ২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিকিনি ছবি মন্তব্য বাক্সে পোস্ট করে স্যাম খান নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ঐ ব্যক্তি লিখেন, 'লজ্জা বলতে কিছু নেই আপনার... একজন বাংলাদেশি মেয়ে মানুষ হয়ে...'
পিয়া ওই ব্যক্তিকে কোনো অশালীন কথা, কিংবা গালিগালাজ করেননি, বরঞ্চ তিনি সাম্প্রতিক সময়ের একটি বিকিনি ছবি পোস্ট করে লিখেন, 'অনুগ্রহ করে আমার আপলোড করা নতুন বিকিনি ছবি দেখুন, যেটা আপনি পোস্ট করেছেন সেটা ৫ বছর পূর্বে। নিজেকে আপডেট করুন।'
যে উত্তর দিয়েছেন তাতে ওই ব্যক্তি নিশ্চই পালানোর পথ খুঁজছিলেন। তবে নেটিজেনরাও ছেড়ে কথা বলেননি লোকটিকে। তারাও খুঁজে বের করেছেন সমালোচনা কারী ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইল, যেখানে দেখা যায় তিনি তার ফেসবুক লিস্টে যুক্ত করেছেন স্বল্পবসনা নারীদের। শুধু তাই নয়, নিজেই লাইক দিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন প্রাপ্ত বয়ক্সের ফেসবুক পেইজে। নিজের আপলোড করা ছবিতে রয়েছে নেশাজাত দ্রব্যের ছবি।
২০১৩ সালে মিশরের রেড সি, এলগোয়ানাতে অনুষ্ঠেয় 'টপ মডেল অব দ্য ওয়ার্ল্ড-২০১৩'-এ বিভিন্ন দেশের ৪৭ জন মডেলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন পিয়া। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। সেসময় বিকিনি পরা ছবিতে তাকে নিয়ে দেশের শোবিজ অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে পিয়া বলেছিলেন, যারা সমালোচনা করে তারা সুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ধারণা রাখে না, কেন না এইসব প্রতিযোগিতার একটি সেগঅমেন্ট থাকে বিকিনিতে। এটা প্রতিযোগিতার অংশ। এটা জানলে কেউ সমালোচনা করতো না।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করার সূত্র ধরে সমালোচিত হতে হয়েছিলো মডেল অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুলকে। সে সময় ফেসবুক লাইভে এসে তার জবাব দিয়েছেন পিয়া। বলেছিলেন, পাবলিক ফিগার এজন্য এত কথা সহ্য করি। অনেকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনেক কথা বলে। এত লম্বা, এত মোটা, এত শুকনা! অনেক কথা বলতে থাকে। আমরা তো কাউকে দেখে এসব বলি না। কারণ আমরা ম্যানার জানি। বাসায় শিখেছি, বড় হয়ে শিখেছি। আপনি একটা অশিক্ষিত পরিবার থেকে আসছেন এ সবাইকে আপনার বোঝাতে হবে? এটা খুব দুঃখজনক।
পিয়া সেই সময় আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমরা খুবই শিক্ষিত, ভদ্র এটা আমরা বারবার দেখাতে চাই মানুষকে। আমি একটা কথা জানতে চাই... আমি মডেল। এর পাশাপাশি আমার পড়াশুনা শেষ, আইনজীবী হয়ে গিয়েছি কিংবা ব্যবসা করছি। কিন্তু মানুষ তো আমাকে মডেল হিসেবেই চেনে। তাহলে আপনারা আমার কাছে কী আশা করেন? আমি বোরখা পরে ঘুরব? বোরখা করে ছবি আপলোড দেব? হিজাব পরে, নেকাব পরে.. এরকম কোনো কিছু? আমি যদি মডেল নাও হতাম, আমি যা পরি নিজের পছন্দেই পরি।
তিনি আরও বলেন, বুঝতে পারি যে আমরা মানসিকভাবে অনেক কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত না। ঠিক আছে প্রস্তুত হওয়ার দরকার নাই। তাই করেন যা আপনার করতে ইচ্ছে হয়। বাসায় বসে থাকেন। ফেসবুক চালাবেন না, ইনস্টাগ্রাম চালাবেন না। কিছু দেখা লাগবে না। কিন্তু মানুষকে কেন বিরক্ত করবেন? আমি এটাই বুঝি না। আপনার কথা শোনার জন্য কেউ বসে নাই। আপনার কী মনে হয় আপনার কথা শুনে আমি হিজাব পরতে নেমে যাব? না। আমি তাই করবো যা করতে আমি পছন্দ করি।
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া বেশ আগেই একজন নামী মডেলে হিসেবে দেশের শোবিজ অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছেন । পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্তর্জাতিক প্রোগ্রাম থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগের মুম্বাই সংস্করণের প্রচ্ছদ মডেল হয়েছেন বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। মডেলিং ছাড়া তিনি অভিনয়ও করেন।
পিয়া ২০০৭ সালে মিস বাংলাদেশ খেতাব অর্জন করেন। এছাড়া ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটি’ শিরোপাও অর্জন করেন তিনি। জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়ার ডাক নাম পিউ।