গত ১৮ ডিসেম্বর ৩টা ১০ মিনিটে চিকৎসাধীন অবস্থায় চলচ্চিত্র সম্পাদক ও নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও অনুরাগীরা।
সবাই শেষবারের মতো দেখলেন টুটুলের মুখ,কাঁদলেন। ভাসলেন অতীতের সকল স্মৃতির সমুদ্রে। তার শোকে ও কান্নায় শহীদ মিনার যেন ভেসে গেল। শ্রদ্ধা নিবেদন তার মরদেহ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে বাদ যোহর নামাযে তার শেষ জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
তাকে স্মরণ করে স্ত্রী অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম বলেন, ‘আমি কোনোদিন আত্মীয়স্বজন এর সামনে সাইদুল আনাম টুটুলকে স্বামী বলিনি। কারণ,স্বামী শব্দের অর্থ প্রভু। আর তিনি কখনো আমার প্রভু ছিল না। তিনি ছিল আমার খুব ভালো বন্ধু।’
তিনি বলেন, ‘আজ এখানে এসে আমি যা দেখছি তাতে আমি অভিভূত হচ্ছি। সেই সাথে অত্যন্ত বেদনার সাথে ইতিহাসের একটি নির্মম সত্যকে মনে হচ্ছে। শিল্পী-সাহিত্যিক যারা সৃজনশীল কাজে জড়িত তারা মৃত্যুর পরে স্বীকৃতি পান, বেঁচে থাকতে নয়। সেই সত্য আবারও প্রমাণ হলো। বেঁচে থাকতে তার ভেতর কষ্ট ছিল। সৃজনশীল যেই তাড়নায় সে তাড়িত হতো, সেই কাজ সে সবসময় করতে পারেনি। কারণ শিল্পীদের তাড়না থাকে, কিন্তু সামর্থ্য থাকেনা। আর সামর্থ্য যাদের থাকে, তারা শিল্প চান না। তারা চান ব্যবসা। টুটুল নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন ছিল।’
দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণ না করলেও সম্প্রতি তিনি একটি নতুন ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন। সরকারি অনুদানে ‘কালবেলা’ শিরোনামে সিনেমা তৈরি করছিলেন তিনি। ২০০১ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘নারীর ৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্যকাহিনি’ বই থেকে এই ছবির গল্পটি নেয়া হয়েছে।
সাইদুল আনাম টুটুল ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। ২০০৩ সালে ‘আধিয়ার’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। এর আগে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ সিনেমা সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘুড্ডি,দহন,দীপু নাম্বার টু ও দুখাইয়ের মতো সিনেমার সঙ্গে রয়েছেন তার সংশ্লিষ্টতা এবং সেগুলোর সম্পাদনায় ছিলেন তিনি।