Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কলঙ্কমুক্ত হতে দুধ দিয়ে গোসল করেছি: ছাত্রলীগ নেতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪৪ AM
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪৪ AM

bdmorning Image Preview


কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে অভিমানে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা। দুধ দিয়ে গোসল করে নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন- এমনটিই বলছেন এই ছাত্র নেতা।

২২ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশু জগ ভর্তি দুধ ছাত্রলীগ নেতার মাথায় ঢালছে আর তা সারা শরীরে মেখে নিচ্ছেন তিনি। যিনি ভিডিওটি ধারণ করছেন তিনি প্রশ্ন করছেন আরও রাজনীতি করবা? এ সময় হাত নেড়ে না করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।

দুধ দিয়ে গোসল করা এই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. আরমিন মিয়া। তার বাড়ি উপজেলা সদরের বড়বাড়ি এলাকায়। পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নবগঠিত উপজেলা ছাত্রলীগের ১ নম্বর সহ-সভাপতি তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি আপলোড করেছেন আরমিন নিজেই। সেই পোস্টে তাকে দুঃসময়ের ত্যাগী এবং কারা নির্যাতিত নেতা উল্লেখ করে এই নেতাকে মূল্যায়ন না করায় দুঃখ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ আবার এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চেয়ে মন্তব্য করেছেন।

ভিডিওর ক্যাপশনে আরমিন লেখেন, ‘১২ বছর ছাত্রলীগ থেকে আমার অর্জন ৭ টা মামলার আসামী, সর্বোচ্ছ গ্রাইন্ড নিয়ে গত ১ বছর পুলিশের হয়রানী। বিদায় বেলায় পেশাগত জীবনে পঙ্গু, শূন্য পকেটে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে বিদায় নিলাম। ছাত্রদল আগত,বিএনপি পরিবার থেকে আগত কারো কাছে আত্নসমর্পণের চেয়ে বিদায় নেওয়া বেটার সিদ্ধান্ত, রাজনীতিটা বুক দিয়ে নয়, আবেগ দিয়ে করেছি,আবেগে ভেজালের স্থান নেই। ভাল থাকবেন প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ভালবাসার সুলতান গ্যাং...দ্যা কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার। প্রকৃতি কাউকে খালি হাতে ফেরায় না,প্রকৃতি সঠিক সময়ে ফিরিয়ে দেয়,দিবে, অপেক্ষায় থাকলাম।’ (বানান অপরিবর্তিত)

ছাত্রলীগ নেতার এই পোস্টে পুলিশি নির্যাতনের একটি ছবি যোগ করে মোহাম্মদ পায়েল ফেরদৌসী নামে একজন লেখেন, ‘এই সেই আরমিন, যে নিজের জীবন বাজি রেখে সাবেক সাংসদকে রক্ষা করেছিল। জেলেও গেল। কোথায় তার প্রতিদান? সেও কিন্তু আজ অভিমানীদের কাতারে চলে গেল...’

মো. নাঈম খান নামে একজন লেখেন, ‘দিনশেষে ত্যাগী কর্মীদের হতাশ আর নিরাশ হওয়া ছাড়া তারা কিছুই পায় না...তারপরেও ছাত্রলীগের প্রতিটা কর্মী অনেক কষ্ট বেদনা বুকে ধারণ করে সংগঠনটি করে। আপনার অনেক শ্রম-ঘাম ছিল, তারা আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করে নাই। আপনার জন্য দোয়া ও শুভ কামনা রইল।’

অভিমানী আরমিন বলেন, ‘আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম। এছাড়াও আরও যে পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে আমি সিনিয়র। কিন্তু বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও তোফায়েল আহমেদ তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। যেটা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাই। এই কমিটিতে যাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তারা আমার জুনিয়র। কমিটিতে জুনিয়রদেরকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখে আমাকে করা হয়েছে ১ নম্বর সহসভাপতি।’

এতে তাকে সম্মানিত না করে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। বলেন, ‘আমার ১২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ৭টি মামলার আসামি হয়ে দুবার কারাবরণ করেছি। এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত জেলে বসে দিয়েছি। অথচ আমাকে মূল্যায়ন না করে মূল্যায়ন করা হয়েছে জামায়াত-বিএনপি থেকে উঠা আসা ছেলেদের। তাই নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করতে দুধ দিয়ে গোসল করেছি।’

রাজনীতিতে আপনি থাকছেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘রাজনীতিতে ছিলাম, আছি, থাকব।’ নিজেকে খানিকটা শান্ত্বনা দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন বলেন, ‘যারা প্রকৃত অর্থে সংগঠনকে ভালবেসে মনেপ্রাণে ছাত্রলীগটা করেন তাদের সমন্বয়েই পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কোনো জায়গায় যখন কোনো একটি ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয় তখন সবাইকে তো আর সমানভাবে খুশি করা সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রে একটি অংশের মধ্যে নানান ধরনের মান অভিমান থাকবেই।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখেছেন উল্লেখ করে আরমিনের এমন কাণ্ডকে তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

Bootstrap Image Preview