Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাস্তা চায় ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:১০ PM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:১০ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জ ও পশ্চিমবঙ্গের হিলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে একটি মহাসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যঃসমাপ্ত ভারত সফরে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা উদ্যোগের আওতায় ভারত ওই প্রস্তাব দেয়। এই প্রেক্ষাপটে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যকার ত্রিদেশীয় মহাসড়কে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছেন। এবারের সফরে দুই দেশ যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে তার খাতওয়ারি তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতীয় পক্ষ। তাতে এই প্রস্তাবের বিষয়টি স্থান পায়। খাতওয়ারি তথ্যে ভারত বলেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সফরে দুই দেশের মধ্যে যৌথ সম্মতিতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে দুই দেশের বন্ধুত্বকে ‘অবিচল’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেল সংযোগ উন্নয়নে চলমান উদ্যোগগুলো উভয় পক্ষ মূল্যায়ন করেছে। টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের উদ্যোগ পর্যালোচনা, বাংলাদেশ রেলওয়েকে ‘রেলওয়ে রোলিং স্টক’ সরবরাহ, ভারতীয় রেলওয়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটিসংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এতে জানানো হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগ উন্নয়নে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে ভারত। এর মধ্যে কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর রেলপথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেলস্টেশনের মানোন্নয়ন, বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেলসংযোগ পুনঃ স্থাপন, সিরাজগঞ্জে একটি কনটেইনার ডিপো নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, অগ্রগামী এসব প্রকল্পের জন্যে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতার আওতায় একাধিক আর্থিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০টি ব্রড গেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।

সামরিক বাহিনীর জন্য যানবাহন কিনবে বাংলাদেশ

৫০ কোটি মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিরক্ষা ঋণের আওতায় বাংলাদেশ তার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যানবাহন সংগ্রহের পরিকল্পনাসহ কয়েকটি প্রকল্প প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করতে সম্মত হয়েছে। বর্ধিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে ভারত বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে।

কুশিয়ারায় সমঝোতায় সহযোগিতা করেছে আসাম রাজ্য সরকার

আসাম রাজ্য সরকারসহ ভারতের সব অংশীদারের সহযোগিতায় কুশিয়ারা নদী নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কৃষকদের সাহায্য করবে। একইভাবে দক্ষিণ আসামও এ থেকে উপকৃত হবে।

ফেনী নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অনুরোধের বিষয়টি বৈঠকে বাংলাদেশকে জানিয়েছে ভারতীয় পক্ষ। ত্রিপুরার জনগণের জন্য খাওয়ার পানি প্রকল্পের মাধ্যমে শিগগির ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের জন্য ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত এমওইউ বাংলাদেশের সম্মতি সাপেক্ষে বাস্তবায়িত হবে।   

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তথ্যবিনিময় এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য এখন অন্য নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গঙ্গার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনেও উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।

২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বাংলাদেশ আবারও ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে। নদী দূষণ মোকাবেলা, নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষই একমত হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা

‘সিনক্রোনাইজড গ্রিড কানেক্টিভিটির’ মাধ্যমে কাটিহার (বিহার) থেকে পার্বতীপুর (বাংলাদেশ) হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে ‘স্পেশাল পারপাজ ভেহিকল’ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে উদ্যোগ নেবে। এই সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে মৌসুমি চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই সহজতর হবে। নেপাল, ভূটান ও বাংলাদেশকে সংযুক্তপূর্বক উপ-আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড বাস্তবায়ন উদ্যোগ আরো জোরালো হয়েছে।

জ্বালানি খাতে সহযোগিতা

বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে উভয় পক্ষই আন্তঃসীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হওয়ার আশা করছে। এর মাধ্যমে ভারত থেকে সরাসরি বাংলাদেশে উচ্চগতির ডিজেল পরিবহন হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত উভয় দেশের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা নিশ্চিতে সম্মত হয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড এখন বাংলাদেশে সরকারিভাবে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে।

অন্যান্য

সংকট মোকাবেলায় ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ‘অনুমানযোগ্য সরবরাহ’  নিশ্চিতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় পণ্য সরবরাহের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

ত্রিপুরাসহ পুরো সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোর উদ্যোগের ফলে সীমান্তে মৃত্যুর হার কমেছে। যদিও গতকাল আবার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

উভয় নেতাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা ও মৌলবাদের বিস্তার রোধে সহযোগিতা জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

Bootstrap Image Preview