Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঢাকার শিশুরা ‘হ্যান্ড-ফুট-মাউথ’– রোগে আক্রান্ত হচ্ছে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:১৮ PM
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:১৮ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানী ঢাকাতে বেড়েছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। শিশুদের এই রোগটিকে অনেকেই চিকেন পক্সের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এতে সাধারণত মুখ, পায়ের পাতা, হাঁটুর উপরে ও হাতের তালুতে ফোস্কার মতো র‍্যাশ হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আপনাআপনি ভালো হয়ে যায় হ্যান্ড ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস। তবে রোগটি অতিমাত্রায় সংক্রামক। তাই আক্রান্ত শিশুকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।

রাজধানীর অনেক স্কুলেই শিশুদের মাঝে দেখা যাচ্ছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ রোগটি। হাত-পা কিংবা মুখে ফোস্কার মতো র‍্যাশ এই র‍্যাশ যন্ত্রণাদায়ক,দেখতে অনেকটা চিকেন পক্স এর মত। হাত পা ও মুখ আক্রান্ত হয় বলে রোগটির নাম হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। জ্বর দিয়ে রোগের শুরু পর্যায়ক্রমে ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত যায়। এর পরেই মুখের দেখা দেবে ছোট ছোট সাদা আকৃতির ফুসকুড়ি ঠোঁটের আশেপাশে দেখা দেয় র‍্যাশ।

রাজধানীর চারটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে রোগটির বিস্তারের কথা জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন এ রোগের বাড়তে থাকা প্রবণতার কথা জানিয়েছেন।

দেশের খ্যাতনামা শিশুবিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সহিদুল্লা মঙ্গলবার বলেন, ‘আমি প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি শিশুকে পাচ্ছি, যারা হ্যান্ড–ফুট–মাউথে আক্রান্ত। গত দুই তিন বছরে এর তেমন প্রাদুর্ভাব দেখিনি। এবার এর বিস্তার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে।’

হ্যান্ড–ফুট–মাউথ রোগের লক্ষ্মণ কী, কাদের হয়

চিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণত এক বা দেড় বছর বয়স থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের এ রোগ হয়। তবে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের এ রোগ বেশি হয়।

কক্সস্যাকিভাইরাস নামে একটি ভাইরাসের প্রভাবে এ অসুখ হয়। প্রাথমিকভাবে জ্বর হয়। আবার অনেকের জ্বর নাও হতে পারে। আবার কারও জ্বার বাড়তেও পারে। এরপর হাতে, পায়ের পাতায়, কনুই ও হাঁটুতে ফুসকুড়ি হয়। অনেক শিশুর মুখের ভেতরেও ফুসকুড়ি হয়। এগুলো দেখতে চিকেন পক্সের মতো অনেকটা। দেখলে মনে হয়, এসব ফুসকুড়ির মধ্যে ঘোলা পানি জমেছে।

জ্যেষ্ঠ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুখ গহ্বরে হলেই শিশুদের বেশি কষ্ট হয়। এ সময়টাতে শিশুদের খেতে অসুবিধা হয়। খাবার গিলতে ব্যথা লাগে।’

কোন সময় এ রোগ বেশি হয়, সুরক্ষার উপায় কী

সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমেই এর প্রকোপ বাড়ে বলে জানান চিকিৎসকেরা। পাঁচ বছর আগে এর বেশি বিস্তার ঘটেছিল বলে স্মরণ করতে পারেন অধ্যাপক সহিদুল্লা। এরপর এ বছর বেশি হার ঘটছে, বিশেষ করে রাজধানীতে। তবে দেশের অন্য স্থানেও এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তিনি।

চিকিৎসকেরা বলছেন, হ্যান্ড–ফুট–মাউথ ছোঁয়াচে অসুখ। কোনো শিশু এতে আক্রান্ত হলে তাকে অবশ্যই স্কুলে দেওয়া যাবে না। পরিবারের মধ্যেও একধরনের আইসোলেশনে তাকে রাখতে হবে।

শিশুবিশেষজ্ঞ আবিদ হোসেন মোল্লা বলছিলেন, এই ছোঁয়াচে রোগ সাধারণত হাঁচি–কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া শরীরে হওয়া ফুসকুড়িগুলোর ফেটে গেলে সেখানকার রস থেকে ছড়াতে পারে। বাড়ির অন্য শিশুরা যাতে আক্রান্ত না হতে পারে, সে জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

শিশুর চিকিৎসা কী হবে

চিকিৎসকেরা বলছেন, ভাইরাসবাহিত এ অসুখের কোনো টিকা নেই। আসলে এর কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধও নেই। অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, হ্যান্ড–ফুট–মাউথে আক্রান্তদের জ্বর হলে সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিতে হবে। আর অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

সাধারণত অসুখবিসুখ হলে শিশুরা কম খাবার–দাবার গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রেও খাবারের জন্য জোর–জবরদস্তির কোনো দরকার নেই বলেই মনে করেন আবিদ হোসেন মোল্লা। তাঁর কথা, শিশু কিছু কম খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তাকে যথেষ্ট পানি খাওয়াতে হবে। একটু বড় শিশুকে দুধ বা আইসক্রিম দেওয়া যেতে পারে। মুখের ভেতরে ফুসকুড়ি ওঠায় কম খেতেই পারে। কিন্তু বারবার পানি খাওয়াতে হবে। একটি বিষয় সতর্কভাবে দেখতে হবে, শিশুর প্রস্রাব যেন স্বাভাবিক হয়।

ভিটামিন সি বেশি করে গ্রহণ করলে এ অসুখ দ্রুত সারে এর কোনো প্রমাণও নেই বলে জানান ডা. আবিদ। তিনি এ অসুখ হলে শিশুকে নিয়মিত গোসল করানোর পরামর্শ দেন। তাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে। আর আবিদের পরামর্শ হলো, করোনাভাইরাসের জন্য যেসব নিয়ম মেনে চলা হয়, এ ক্ষেত্রেও তার অনেকটা করতে হবে। সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানগুলোও পরিষ্কার করা যেতে পারে।

ভীতির একেবারেই কোনো কারণ নেই

চিকিৎসকেরা বলছেন, হ্যান্ড–ফুট–মাউথ নিয়ে ভীতির কোনো কারণ নেই। এটা স্বাভাবিক একটি ভাইরাসবাহিত অসুখ। অসুখ হওয়ার পর চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এটি সেরে যায়।

মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘অভিভাবকদের সচেতনতা একটি বড় বিষয়। এ রোগ যেন অন্যদের মধ্যে ছড়াতে না পারে, সে জন্য তাদের সচেতন হতে হবে।’
আবিদ হোসেন মোল্লার পরামর্শ, অপেক্ষা করার এবং দেখার। এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই। নিয়মগুলো মানতে হবে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এ অসুখ যাতে ছড়াতে না পারে, বাড়তি সতর্কতার দিকটি সেখানেই।

সূত্র: প্রথম আলো 

Bootstrap Image Preview