Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দিল্লির পথে প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৭ AM
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৭ AM

bdmorning Image Preview


চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকাল ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রওনা হয়েছেন তিনি।

ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে এসে অবতরণের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইটটির।

বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী উঠবেন হোটেল আইটিসি মাওরায়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৭১ জন।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঘিরে ঢাকার মতো বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে দিল্লিতেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার এ সফরকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

সফরে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কূটনৈতিক পর্যায়ে সাফল্যের বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। কারণ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় আগ্রহের বিষয় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে বড় কোনো অগ্রগতির সংবাদ এখনও জানা যায়নি।

দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ ও সহযোগিতার জন্য দিল্লিকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এ বিষয়ে ভারতের সম্মতি পাওয়া গেলে এই ইস্যুতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত বুঝতে চাইবে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তব রূপ।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারসহ ছয়টি নদীর পানিবণ্টন-বিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব (সিইপিএ) বা সেপা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যৌথ ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।

এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় ভারত।

ভারত বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে যৌথ প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে একটি কাঠামো নির্মাণ (সামরিক সরঞ্জাম কারখানা স্থাপন) চুক্তির জন্য জোর দিচ্ছে। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির বিষয়ে এই চুক্তিকে ভারত অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে দুই দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তুতিও রয়েছে।

ব্লু ইকোনমিতে (সুনীল অর্থনীতি) সহযোগিতা এবং দুই দেশের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম কর্তৃপক্ষের মধ্যে ইতিপূর্বে স্বাক্ষরিত দুটি এমওইউ এবারের শীর্ষ বৈঠকের পর আবার নবায়ন করা হবে। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইসহ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনায় রূপসা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতু উদ্বোধন করতে পারেন।

আজ থেকে শুরু হওয়া এই সফরসূচিতে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং ৬৬০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন, ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশে ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ ও যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারবর্গের মধ্যে মুজিব স্কলারশিপ প্রদানের ঘোষণা।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, এই সফর দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে এবং প্রতিবেশী ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করবে।

দিল্লির সাউথ ব্লক মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অত্যন্ত ইতিবাচক ফল দেবে এবং বর্তমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করবে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের ও পরীক্ষিত। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও টানা দুবারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে আসতেও পারে চমকপ্রদ কোনো ঘোষণা।’

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে উচ্চাশা ব্যক্ত করেছেন। তার ভাষ্য, ‘শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত সফল হবে। এ সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক মূলত রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সৈনিকরা রক্ত দিয়েছে। এ সম্পর্ক কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘দেবে আর নেবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে।’ এই সম্পর্ক ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভারতের বিশেষ ভূমিকা থাকা দরকার। বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতির প্রতি ভারত সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি খুবই জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘যে সম্পর্কে উভয়েই লাভবান হয়, মূলত টেকসই হয় সেই সম্পর্কই। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের অধিক যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।’

দিল্লির বর্ষীয়ান সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, ‘এই সফরে আমি গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক দেখছি। এর একটি হলো দীর্ঘ তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দ্বিপাক্ষিক ভারত সফর। এর মাঝেও তিনি একবার ভারত ঘুরে গেলেও রাষ্ট্রীয় সফর ছিল না। রাষ্ট্রীয় সফরগুলোতে সাধারণত দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকা হয়।

‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে, বাংলাদেশ যেহেতু ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, ভারতেরও এ রকম একটি ঘোষণা আছে। তাই এই সফরে চমকপ্রদ কোনো ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত না এলেও যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে ও যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হবে, তাতে আগামী ২৫ বছরে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রতিফলিত হবে বলে আমি মনে করি।’

রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক- সবদিক থেকেই সফরটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সরকার বা নীতিনির্ধারকরাও প্রবল আগ্রহ নিয়ে এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে মনে করে সাউথ ব্লক।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর ভাষ্য, ‘সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে, এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়েও বেশ ঘন ঘন বৈঠক হয়েছে। তার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে খুবই শক্তিশালী করে তুলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ এই সম্পর্কটা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।’

প্রধানমন্ত্রীর এবারের দিল্লি সফরে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতার সঙ্গে বৈঠকের সূচি রাখা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ ১৭১ জন যোগ দিচ্ছেন।

ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণে গুরুত্ব পাবে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ইস্যু। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বৈঠক করে ফেলেছেন দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

ভারতের দেয়া ঋণে তাদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার একটি তালিকাও দিল্লির কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। কূটনীতিকরা এটিকে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারের একটি অংশ হিসেবে দেখছেন। বৈঠকে দুই দেশ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

বৈঠকে বৈশ্বিক মেরুকরণ মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতার বিষয় নিয়ে উপ-আঞ্চলিকভাবে একত্রে কাজ করতে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। এপ্রিলে ঢাকা সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে চায় নয়াদিল্লি।

ভারত চাইবে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে। কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেভাবে মেরুকরণ হচ্ছে, এতে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের স্বার্থে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা তৈরি করা গেলে ১৫০ কোটি মানুষের বাজারটিকে যথাযথ ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া যাবে। আর আঞ্চলিক আত্মনির্ভরতা বাড়লে কোনো মোড়লের চোখরাঙানি আমাদের বিচলিত করতে পারবে না।

দুই দেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে এবারের বৈঠকে বোঝাপড়া হবে। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় নিরাপত্তার অনেক বিষয় না থাকলেও দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে আলোচনা হবে। শ্রীলঙ্কায় চীনের বলয় বিস্তার নিয়ে এক প্রকার অস্বস্তিতে ছিল ভারত। আর বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে চীনের সম্পর্ক বাড়ছে, তাও ভাবিয়ে তুলেছে ভারতকে। ভারত সব সময় চায়, বাংলাদেশে একটু ভারতমুখী সরকার।

বৈঠকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। আর সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে বাড়তে থাকা জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার উপ-আঞ্চলিক শাখার বিস্তার নিয়েও আলোচনা হবে দুই দেশের মধ্যে।

এদিকে দুই দেশের সমুদ্র নিয়ে বিরোধ বিষয়েও প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। আসন্ন সফরে দুই দেশের মধ্যে সেপা চুক্তি সই না হলেও এ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার দিকনির্দেশনা আসবে শীর্ষ পর্যায় থেকে। দুই দেশের সম্পর্কে মোটাদাগে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যবৈষম্য দূর করতে অশুল্ক বাধার মতো বিষয়গুলো অনিষ্পন্ন রয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে।

বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশ ভারতের জন্য যা যা করেছে, তার উপযুক্ত প্রতিদান ভারত দিতে পারেনি, এমন একটা ধারণা বাংলাদেশে অনেকের মধ্যেই আছে। আর ভারতও সেই উপলব্ধিটা নিয়ে ক্রমেই আরও বেশি সচেতন হচ্ছে। ভারতও যে বাংলাদেশের জন্য সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত, সফরে এই বার্তাটা দেয়ার জন্য সাউথ ব্লকে অতিরিক্ত তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচি

দিল্লিতে পৌঁছানোর পর হোটেল আইটিসি মাওরায় বিশ্রাম শেষে বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় যাবেন। হোটেলে ফিরে তিনি ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ভবনে গিয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরানের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন।

পরের দিন মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হবে। সেখানে তারা ছবি তুলবেন।

এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখান থেকে তিনি হোটেলে ফিরে যাবেন, পরে আসবেন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বৈঠক শেষে নামাজের বিরতির পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। সইয়ের পর দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এরপর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে দেয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যাহ্নভোজ।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধনকড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে হোটেলে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করবেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এরপর তিনি তাদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি মতবিনিময় করবেন এখানকার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এই মতবিনিময় সভার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী।

ওইদিন বিকেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ ও যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের হাতে মুজিব স্কলারশিপ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৮ সেপ্টেম্বর জয়পুর হয়ে আজমির শরিফ দরগায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় জয়পুর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

Bootstrap Image Preview