Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ওসি আমাকে রিসোর্টে যেতে বলেছে, এসআই আমার শ্লীনতাহানীর চেষ্টাও করেছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪ PM
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে প্রেরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে কুমিল্লার মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বাদী।  

মামলায় মেঘনা থানার এসআই মো. মোশাররফ হোসেনকে প্রধান এবং ওসি ছমি উদ্দিনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। তবে এই মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন ওসি ও এসআই।

রবিবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান জানান, আদালতের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনাটি সহকারী পুলিশ পুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী ওই নারীর আদালতে দায়ের করা অভিযোগের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান জানান, মেঘনা থানার শিকিরগাও এলাকার এক প্রবাসীর স্ত্রী (২৬) তাদের পারিবারিক ও স্বজনের জায়গা-জমির বিরোধের বিষয়ে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বেশ কয়কবার থানায় আসা-যাওয়া করেন। এই সুযোগে ওসি ছমি উদ্দিন ও এসআই মোশাররফ তাকে প্রায়ই ফোন করতেন। এক পর্যায় ওসি ছমি উদ্দিন ওই নারীকে মেঘনা রিসোর্টে সময় কাটাতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন এবং এসআই প্রায়ই ফোন করে তাকে অশোভন প্রস্তাব দিতেন। তারা দুজনে ওই নারীর মোবাইল নম্বর এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিতেন। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দুজনেই ওই নারীর উপর ক্ষুব্ধ হন।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গত ২৬ আগস্ট ওই নারীর বোনের স্বামীকে গ্রেপ্তার করতে যান ওসি ও এসআই। সেদিন তিনি মামলার ওয়ারেন্ট দেখতে চাওয়াতে এসআই মোশাররফ তাকে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে আসেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসআই মোশাররফ পুলিশদের সহায়তায় ফের টেনে-হিঁচড়ে তাকে ওসির রুমে নিয়ে যান এবং রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় ওসি তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং চিৎকার করলে ধর্ষণের হুমকি দেন। ওসি তার মুখ চেপে ধরে শ্লীনতাহানীর চেষ্টা করেন।  

পরে ২৭ আগস্ট সকালে ওসি ও এসআই আবার তাকে একই প্রস্তাব দেয় এবং বলে তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে- তাকে ছেড়ে দেবেন। এতেও তিনি রাজি হননি। পরে তারা নারীর হাতের মোবাইলফোন সেটটির লক খুলে সকল প্রমাণ মুছে ফেলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করেন। ঘটনার পর আটদিন কারাগারে থাকার পর ওই নারী জামিনে এসে মামলাটি দায়ের করেন।
 
মামলার বাদী ওই নারী রবিবার রাতে  বলেন, আমার মানসম্মান সব শেষ করেছে তারা। তারা ভেবেছিল আমি প্রবাসীর স্ত্রী, এজন্য তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি হয়ে যাব। ওসি আমাকে রিসোর্টে যেতে বলেছিল। অথচ আমি সেদিনের আগে রিসোর্টই চিনতাম না। পরে আমি বললাম রিসোর্টে কেন যাব? আপনি যা বলার আমাকে থানাতেই বলেন। এতে তিনি বলেন- রিসোর্টে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা বলবেন। তিনি আমাকে রাতের বেলায় প্রায়ই কল দিতেন। অন্য একটি মামলার কারণে আগে থেকে পরিচিত থাকায় তিনি আমার বাড়িতেও আসতে বলতেন, কিন্তু আমি কখনো রাজি হইনি। আর এসআই মোশাররফতো জোর করে আমার শ্লীনতাহানীর চেষ্টাও করেছে। আমি এসবের বিচার চাই। তারা ভেবেছে আমি ভয়ে কথা বলব না। কিন্তু আমি চাই আমার মতো যাতে কোন নারী এমন নির্যাতনের শিকার না হন।
 
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, এই মহিলা ভিষণ উগ্র। তার বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় একটি ওয়ারেন্ট ছিলো আদালতের। আমাদের সদস্যরা আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি (ওই নারী) ওয়ারেন্ট দেখতে চান। ওয়ারেন্ট দেখালেও তিনি আমাদের আসামিকে আনতে দেননি। উল্টো তিনি পুলিশের উপর আক্রমণ করে পোশাক ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধায় দেওয়ার অভিযোগে এসআই মোশাররফ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি জেল থেকে বের হয়ে কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে এখন এসব করছেন। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে ওই সময় মামলা নিয়েছে আমাদের সিনিয়র অফিসাররে জানিয়ে।

অভিযুক্ত এসআই মোশাররফ হোসেন বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার ঘটনাস্থলে ওই নারী আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, তার  ভিডিও রেকর্ড আছে। আমরা তাকে মহিলা পুলিশ সদস্য দিয়ে থানায় এনেছিলাম। কুপ্রস্তাব দেওয়া বা নির্যাতনের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এগুলা ওই মহিলার বানানো কথা। পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করায় এখন পুলিশের বিরুদ্ধে লেগেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, আমি মামলার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও আদালত থেকে আদেশের কোন কাগজপত্র পাইনি। কোর্ট ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলে দেখি কী করা যায়।  

Bootstrap Image Preview