রাজধানীর দক্ষিণখান মোল্লারটেক এলাকার একটি ১০ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত তরুণী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে নিজের বাবাকে ‘রেপিস্ট’ ও ‘অমানুষ’ উল্লেখ করে লেখা আছে, আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ি।
শনিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। দক্ষিণখান মোল্লারটেকের ওই ভবনে বাবা-মায়ের সাথেই বসবাস করতেন ওই তরুণী। স্থানীয়রা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১০ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দেন ওই তরুণী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সাথে থাকা যায়, কিন্তু অমানুষের সাথে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট, যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।’
এদিকে, নিহত তরুণীর মা তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
দক্ষিণখান থানা পুলিশ জানিয়েছে, সানজানার বাসা থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে তার মৃত্যুর জন্য বাবা শাহিনকে দায়ী করেছেন সানজানা।
বাসা থেকে পড়াশোনার জন্য টাকা না দেয়ায় লাস্ট সেমিস্টার সানজানা পড়তে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার এক সহপাঠী।
মাইশা আতকিয়া নামের আরেক সহপাঠী বলেন, সানজানা ভালো স্টুডেন্ট ছিল। আঙ্কেল ওকে প্রচুর মারধর করত। গত রমজানে ওকে মেরে তিন দিন বিছানায় ফেলে রাখছিল। বিভিন্ন সময় দেখা যাইত আঙ্কেল আন্টিকে মারতে গেছে, ও প্রটেস্ট করছে, তখন ওরে মারত। ওর হাত ভেঙে গেছিল, এ রকম অনেকবার ঘটছে। লাস্ট সেমিস্টারের আগের সেমিস্টারে ও মাঝখান থেকে ড্রপ করছে। ও নিতে পারে নাই এসব কিছু। বাসা থেকে বলে ওকে টাকা দেবে না।
সানজানার কাজিনদের বরাত দিয়ে মাইশা বলেন, ‘আজকে টাকা নিয়ে ঝগড়া বাধে। ওকে নাকি আঙ্কেল লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। হাত বাধা থাকলে যে রকম দাগ হয় ওর হাতে সে রকম দাগ রয়েছে। লাঠি দিয়ে মারার দাগ আছে।’
সানজানাকে প্রায়ই মারধরের বিষয়টি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক।
তিনি বলেন, ‘একটি ছোট কাগজে লেখা চিরকুট আমরা পেয়েছি। হাতের লেখা যাচাই ছাড়া বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাব। মৃত্যুর কারণ তদন্তসাপেক্ষে জানানো হবে।’