Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডিম, মুরগির দাম বাড়িয়ে ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি টাকা অস্বাভাবিক মুনাফা আয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৫ PM
আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে গত ১৫ দিনে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে পোলট্রি খাতের বড় কম্পানিগুলো। এই সময়ে ডিম, এক দিনের বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে ৫১৮ কোটি টাকার বেশি বাড়তি মুনাফা করেছে দেশের বড় ১০ থেকে ১২টি কম্পানি। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছে পোলট্রি খাতের ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।

উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার, সহসভাপতি বাপ্পি কুমার দেসহ সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতারা। বিপিএ দাবি করেছে, গত ১৫ দিনে কম্পানিগুলো ডিমের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করেছে ১১২ কোটি টাকা। এক দিনের বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৩৪ কোটি টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়িয়ে লুটে নিয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পোলট্রি খাতের ১০ থেকে ১২টি দেশি ও বিদেশি কম্পানি।

সাম্প্রতিক সময়ে খোলাবাজারে ডিম ও মুরগির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ায় উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছিল পোলট্রিশিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকালের সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিপিআইসিসি সভাপতি ও প্যারাগন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান। তিনি  বলেন, ‘এই সংগঠনের সদস্য কারা কিংবা কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, সেটি আমরা এখনো নিশ্চিত নই। আর কী বলেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমরা পাইনি। আমাদের সন্দেহ আছে এরা আসলেই খামারি কি না। আমরা এরই মধ্যে পোলট্রি খাতের দাম বাড়ার কারণ জানিয়েছি। এ ছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম কমিয়ে আনতে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’

বিপিএর সংবাদ সম্মেলনে সুমন হাওলাদার জানান, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা সাড়ে চার কোটি পিস। এর মধ্যে বড় কম্পানিগুলো এই চাহিদার আড়াই কোটি সরবরাহ করে। তারা প্রতি ডিমে তিন টাকা বেশি নিয়ে প্রতিদিন সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিমুনাফা করেছে। এভাবে গত ১৫ দিনে শুধু ডিম বিক্রির মাধ্যমে কম্পানিগুলো বাজার থেকে ১১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগি বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে কম্পানিগুলো। ব্রয়লারের ক্ষেত্রে কম্পানিগুলো প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি মজুদ সংকট তৈরি করেছে। পরবর্তী সময়ে তা বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে প্রতি কেজিতে বাড়তি দাম নিয়েছে ১৫ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৫ দিনে তারা ১৭২ কোটি টাকার বেশি ভোক্তার পকেট থেকে নিয়ে গেছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন এক কোটি ৩০ লাখ এক দিনের বাচ্চা বিক্রি করেছে। বিভিন্ন সময়ে এক দিনের বাচ্চার দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিয়েছে। গত ১৫ দিনে গড়ে ১২ টাকা করে নিয়ে কম্পানিগুলো ২৩৪ কোটি টাকা এই বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি নিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের যে দাম নির্ধারণ করে, আড়তগুলোও সেই দামই নির্ধারণ করে থাকে। এই প্রক্রিয়া দেশের ভোক্তাদের জন্য শুভ নয়। এভাবে চললে প্রতিটি ডিম ২০ টাকায় খেতে হবে। আর ব্রয়লার মুরগি খেতে হবে ৪০০ টাকা কেজি দরে। বড় কম্পানিগুলো সেই নীলনকশা ধরেই এগোচ্ছে। তাদের এই চক্রান্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কোনো ধরনের প্রতিরোধ করতে পারছে না। বড় কম্পানির কোনো ফিড মিলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা তদারক করেন না। আবার সরকারের প্রণোদনা কার্যক্রমে দেশের প্রান্তিক খামারিরা কোনো কিছুই পাননি উল্লেখ করে নেতারা বলেন, ‘করোনার সময়ে দেশের খামারিদের উন্নয়নে সরকার ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দিয়েছে। সেই অর্থ আমরা পাইনি। এমনকি আমরা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও থেকে লোন নিতে গেলে দেওয়া হয়নি। ফলে দেশের ক্ষুদ্র খামারিরা এক ধরনের শোষণের মধ্যে রয়েছেন। ’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার আরো বলেন, দেশের পোলট্রি খাত এখন মাফিয়াচক্রের হাতে চলে গেছে। ১০ থেকে ১২টি বড় কম্পানি যৌথভাবে এই মাফিয়াচক্র তৈরি করেছে। চক্রটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করতে চাইছে। এরই মধ্যে তাদের পরিকল্পিত চক্রান্তে সারা দেশে প্রায় অর্ধেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কম্পানিগুলো দেশের প্রান্তিক খামারিদের চুক্তিভিত্তিক (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) উৎপাদনে আসতে কৌশলে বাধ্য করছে জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে এক বস্তা ফিড প্রান্তিক খামারিকে কিনতে হলে লাগে তিন হাজার ৩০০ টাকা, কিন্তু কোনো খামারি তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করলে ওই বস্তা পাওয়া যায় দুই হাজার ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ তারা বস্তাপ্রতি ফিডে লাভ করছে ৮০০ টাকা। তারা প্রতিটি ডিমে লাভ করছে তিন টাকা এবং প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে লাভ করছে ২০ থেকে ২২ টাকা।

এ বিষয়ে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে পোলট্রি খাতে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে কাজী ফার্মস। প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা বা খামারিদের কোনোভাবেই প্রতারিত কিংবা ঠকানোর মানসিকতা নিয়ে কাজ করে না। ডিমের বাজারে কম্পানি পর্যায় থেকে কোনো ধরনের অযৌক্তিকভাবে  দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই। তেলের দাম বাড়ার কারণে কয়েক দিন ট্রাক বন্ধ থাকায় ডিমের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। 

Bootstrap Image Preview