Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বড় বোনের সঙ্গে প্রেম হয়নি, ছোট বোনকে অপহরণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৯ PM
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


মো. সায়ের আলম পাভেল (৩৪), পেশায় একজন রংমিস্ত্রি হলেও নিজেকে পরিচয় দিতেন বিবিএ’র ছাত্র বা এমবিএ ডিগ্রিধারী হিসেবে। কখনও কখনও নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে দাবি করতেন। এসব পরিচয়ে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বিয়ের প্রস্তাবও দেন তার পরিবারকে। কিন্তু ওই তরুণী ও তার পরিবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাভেল। পছন্দের পাত্রী ও তার পরিবারের প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সখ্য গড়ে তোলেন তরুণীর ছোট বোনের (১৪) সঙ্গে। সুযোগ বুঝে লন্ডনে বসবাসরত নিজের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে (কথিত) বিয়ে দেওয়ার কথা বলে করেন কিশোরীকে অপহরণ।

এ ঘটনার পর কিশোরীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন পাভেল। দাবি মানা না হলে কিশোরীকে পতিতালয়ে বিক্রির হুমকি দেন। পুলিশকে বিষয়টি জানালে মেয়েকে চিরতরে গুম করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। কিন্তু সাহস করে ভুক্তভোগীর বাবা বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার দায়ের পর তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় পাভেলসহ তিনজনকে। অপর দুজন হলেন মো. শেখ আলমগীর (২৩) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)।

পুলিশ জানায়, গত দুই বছর ধরে ভুক্তভোগী ও তার বোনের সঙ্গে পাভেলের যোগাযোগ ছিল। তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখাও করতেন তিনি। কিশোরীকে অপহরণের পর টাঙ্গাইল নিয়ে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখেন। গ্রেফতার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এর আগেও দুটি মামলা রয়েছে। এ থেকে পুলিশ ধারণা করছে, গ্রেফতারকৃতরা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য।

পুরো ঘটনা নিয়ে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

ডিসি বলেন, গত রোববার (১৪ আগস্ট) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরীকে অপহরণ করেন পাভেল। কিশোরীর বাসা থেকে তাকে টাঙ্গাইলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ভুক্তভোগীর বাবার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন পাভেল। টাকা না দিলে কিশোরীকে পতিতালয়ে বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি। আর পুলিশকে জানালে ভুক্তভোগীকে চিরতরে গুম করে ফেলার হুমকি দেন।

বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর বাবা মামলা দায়ের করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পাভেলের অবস্থান শনাক্ত করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ। পাভেল তার কথিত ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কিশোরীর বিয়ের প্রলোভন দেখান।

তিনি জানান, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে রংমিস্ত্রির কাজের সুবাদে আলমগীরের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় হয়। আলমগীরের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর বড় বোনের সঙ্গে পরিচিত হন পাভেল। এরপর তিনি কিশোরীর বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তরুণীর বাবা-মাকেও বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন। পরবর্তীতে ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে যায়। এ থেকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে পাভেল তরুণীর ছোট বোনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল পাভেলের। অপহরণের পর টাঙ্গাইল গেলে জাহাঙ্গীর কিশোরীর বাবাকে মুক্তিপণের জন্য ফোন দেন।

উদ্ধার কিশোরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, সে পাভেলের কথিত ছোট ভাইকে আগে কখনও দেখেনি। তাকে শুধু ছবি দেখানো হয়েছিল। পাভেলের কথা বিশ্বাস করে অপহরণের শিকার হয় সে।

গ্রেফতার পাভেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি আরও বলেন, ক্ষোভ থেকে কিশোরীকে অপহরণের পর পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তার। আমরা ধারণা করছি, পাভেলসহ অন্যরা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। নানা কৌশলে মেয়েদের অপহরণ করে থাকেন তারা। পরবর্তী তদন্তে পুরো বিষয় স্পষ্ট হবে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

Bootstrap Image Preview