Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পদ্মা সেতুর নাট খোলা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২২, ১০:৪২ PM
আপডেট: ২৭ জুন ২০২২, ১০:৪২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার (২৬ জুন) যান চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হয়। প্রমত্তা পদ্মার বুকে এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশব্যাপী চলছে আনন্দের উচ্ছ্বাস। দেশের এত বড় অর্জন যখন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক তখনই রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক বানানোর ভিডিও নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে বিএনপি। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে দলটি।

গতকাল রোববার (২৬ জুন) বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘৩০ হাজার কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ব্যয় করে ত্রুটিপূর্ণ সেতু নির্মাণ! প্রথম দিনেই নাট-বল্টু খুলে যাচ্ছে।’

এ নিয়ে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। মোতালিব নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সমালোচনারও একটা লিমিট থাকা উচিত। ২/৪টা নাট-বল্টু ঢিলা থাকলেই কাজটি ত্রুটিযুক্ত হয়ে গেল? আচ্ছা, নাট-বল্টু খোলাতে কি সেতু খুলে পড়ে গেছে? আগে গবেষণা করে দেখুন ওই নাট-বল্টুগুলো সেতুর জন্য কতটা জরুরি ছিল। আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দলের নামের পেজ এটা। যে অ্যাডমিন আছেন, আশা করি আরও দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। এমন কোনো পোস্ট করবেন না, যাতে মানুষ উলটা আপনাদেরই নেগেটিভ ভাবে। ধন্যবাদ।’

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, টুল বক্সের যন্ত্রপাতি দিয়ে রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে গ্রেফতার হওয়া মো. বায়েজিদ বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে তার সরাসরি সংযুক্তি। সে ছাত্রদলের কর্মী ছিল। পটুয়াখালীতে থাকাকালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

সে জেলা ছাত্রদলের সা‌বেক সভাপ‌তি গাজী মো. আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বিএন‌পি ও ছাত্রদ‌লের একাধিক নেতা। বায়েজিদ যে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তা বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

তার চাচা মো. ফোরকান মৃধা একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বায়েজিদ জেলা স্বেচ্ছা‌সেবক দ‌লের সাধারণ সম্পাদক এনা‌য়েত হো‌সেন মোহ‌নের চাচাতো ভাই। সে মোহ‌নের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে যেত।’

পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়, একটু পেছন ফিরলেই দেখা যায় এ সেতু নিয়ে আগেও নানা ষড়যন্ত্র করেছিল দলটি। ছিল দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে বানানো সেতুতে, কেউ উঠবেও না।’ এরপর একের পর এক পদ্মা সেতুবিরোধী মন্তব্য আসতে থাকে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে।

এছাড়া সেতু উদ্বোধনের দিন বিএনপির ৭ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দাওয়াত পেয়েও যাইনি, যদি টুপ করে ফেলে দেয়।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যর কাছ থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে এমন মন্তব্য ষড়যন্ত্ররই আভাস বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপি আজ পর্যন্ত পদ্মা সেতুকে ঘিরে তাদের অপরাজনীতি থেকে ফিরে আসেনি। এমনকি এই জোড়াতালির তত্ত্ব থেকে তাদের সাইবার টিমও বের হতে পারেনি। পদ্মা সেতু নিয়ে কল্পকাহিনী ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ ও পরাজিত বিএনপি ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তাদের ভেরিফাইড পেজ দিয়ে চালাচ্ছে অপপ্রচার।

তবে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই ৬.১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ সেতু শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে নিজের সক্ষমতা আর শৌর্যের সাক্ষর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মার বুকে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করা পদ্মা সেতু এখন বৈশ্বিক পরিবহন অবকাঠামোতে প্রকৌশলগত উৎকর্ষ ও অর্জনের প্রতীক।

সেতুটি দেশের যোগাযোগব্যবস্থার অন্যতম মাইলফলকও বটে। অর্থনীতিবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে; ভবিষ্যতে তা হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বড় সম্পদ। ফলে নির্মাণকাজ সফলভাবে সম্পন্ন শেষে এখন পদ্মা সেতু যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।

আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সেরা সব উপকরণ। কনসালটিং প্যানেলের অনুমোদন ছাড়া ঠিকাদারকে এ প্রকল্পে কোনো উপাদান ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। ফলে সেতুটি ১০০ থেকে ১২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

Bootstrap Image Preview