Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিএনপি চার কারণে চাঙ্গা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২২, ০১:৪২ PM
আপডেট: ০৩ জুন ২০২২, ০১:৪২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


রেজাউল করিম লাবলু।।  প্রধানত চারটি কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আশার আলো দেখছে বিএনপি। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতায় জনমনে ক্ষোভ। এ ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার হরণ, দুর্নীতি ও লুটপাট। দ্বিতীয়ত, বিদেশি চাপ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর চাপ রয়েছে। তারা আগামীতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারকে হাইব্রিড সরকার বলছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তৃতীয়ত, দলের পুনর্গঠনের কারণে সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটির নেতারা মনে করছেন, দলমত নির্বিশেষ সবাইকে নিয়ে সরকারের পতন ঘটানো অসম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কিছু করতে হচ্ছে না। সরকার তাদের নিজেদের অপকর্মে নাস্তানাবুদ। সরকার র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের গুম, খুন করার কারণে ইতিমধ্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারছে না। তাছাড়া বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে যেভাবে অপকর্ম করে ক্ষমতায় জোর করে বসে আছে তা দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাও জেনে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছেন সেখানে বাংলাদেশের সরকারকে আমন্ত্রণ জানাননি। এবার যেনতেন নির্বাচন করে পার পাবে না সরকার। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে দলের পুনর্গঠন করছেন তাতে দলের নেতাকর্মীরা উদ্দীপ্ত হচ্ছেন। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। সব মিলিয়ে নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত। নির্দেশ পেলেই তারা আন্দোলন সংগ্রামে নেমে আসবে।’

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিদেশিদের আগ্রহের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও আলোচনা আছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দেশটির সহযোগিতা চেয়েছেন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচিত হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি অস্বীকার করেন। গত মাসে এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিষয়গুলো সুরাহার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ কমিশনের দশম বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে এমন উদ্বেগ জানানো হয়। ওই বৈঠকে দুই পক্ষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনের শাসন, সুশাসন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে সরকার চাপে আছে। বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে হলে সরকারকে কী করতে হবে তা দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেনতেনভাবে করে পার পাবে না সরকার। সরকারকে অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো কাউকে বলেনি আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। বিএনপির দাবি একটাই, সেটা হলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটা জনগণেরও দাবি। কারণ তারা বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা নতুন ভোটার হয়েছে তারা ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব। জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবে। এতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের খুন, গুমের পাশাপাশি হামলা, মামলা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সরকার এখনো গৃহবন্দি করে রেখেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সরকার তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। এরপরও দমে যায়নি বিএনপির সারা দেশের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করে বিএনপি। এসব সমাবেশে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলেও নেতাকর্মীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমাবেশে অংশ নেন। এসব বিষয় ভারতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে।

বিএনপির ওই নেতার দাবি, এখন ভারত বিএনপির বিষয়ে নমনীয়। অন্যদিকে সরকারের ওপর নানা কারণে নাখোশ। তারা চান ভারত সরাসরি কোনো দলের পক্ষ যেন না নেয়।

বিএনপি নেতারা আরও দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারের মনোভাব বিরূপ। এ কারণে বিএনপি মনে করছে, এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিংবা রাতের ভোট আওয়ামী লীগ সরকার আর করতে পারবে না। আর নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির জয় নিশ্চিত। তারা বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও নির্বাচনের তাগিদ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নানা তদবির করেও র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারছে না। এ নিয়ে সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সহযোগিতা চাইছে। এখন আবার রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চাইছে। তাছাড়া এত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও ভারতের কাছ থেকে সরকার তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আনতে পারেনি। তাদের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে। কেউই এখন তাদের পক্ষে নেই। এভাবে সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এরপর সবাই মিলে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামব। সে আন্দোলনে সরকার পরাজিত হবে।’

মোশাররফ আরও বলেন, ‘সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। বেগমপাড়ায় বাড়ি বানিয়েছে। জনগণ পাঁচ বছর পরপর তাদের ভোট তারা দিত। কিন্তু সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এসব কারণে জনগণও সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ।’

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, চীনের সঙ্গে অতিমাত্রায় সম্পর্কের কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারত বর্তমান সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চেয়ে আমাদের সরকার ভারতের সঙ্গে কথা বললেও ভারত সাড়া দিচ্ছে না। বরং তিস্তা প্রকল্পে চীন যে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তাতে নাখোশ ভারত। এজন্য ভারতের মনোভাব এমন যে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। তাতে যে ক্ষমতায় আসবে তাদের সঙ্গেই কাজ করবে ভারত সরকার।

তারা বলেন, সরকারের ব্যর্থতার দায় কেউ নেয় না। বিপদে পড়লে আজকে যাদের সরকার বন্ধু মনে করছে সেই চীনও তাদের পাশে থাকবে না। কারণ চীন চায় ব্যবসা। যে সরকার আসবে তার সঙ্গে চীন ব্যবসা করবে। রাজনীতির বিষয়ে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। বিএনপির প্রতি অনুরাগ নেই কিংবা সরকারের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা নেই। বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্যরা চীনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও ওই নেতারা জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপি চায় দেশি-বিদেশি যেসব শক্তি বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী তারা একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দিক। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন দিলেই আমরা সন্তুষ্ট।’

সূত্রঃ দেশ রূপান্তর

Bootstrap Image Preview