Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ওবায়দুল কাদেরের আসন চান আ.লীগের একরামুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৪০ AM
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৪০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালী-৫ আসনে নজর দিয়েছেন জেলার সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি নিজের আসনের পাশাপাশি পাশেরটিতেও মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কী হবে আমি জানি না। তবে যদি আপনারা চান, আমি নোয়াখালী-৪ ও নোয়াখালী-৫ দুই আসন থেকে নমিনেশন চাইব। জননেত্রী শেখ হাসিনা, উনি সিদ্ধান্ত দেবেন।’

একরামুল ও কাদেরের বাড়ি একই সংসদীয় আসনে। ২০০১ সালে ওবায়দুল কাদের যে বছর শেষবারের মতো হারেন, তখন তার পরাজয়ের পেছনে দায়ী করা হয় একরামুলকে।

সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ধানের শীষ নিয়ে ৮৪ হাজার ৫৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওবায়দুল কাদেরের ভোট ছিল অনেক কম ৪৫ হাজার ৯৭২টি।

আপাতদৃষ্টিতে ব্যবধান অনেক বেশি দেখালেও সেটির কারণ ছিল আওয়ামী লীগে বিভক্তি। একরামুল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ৪০ হাজারের মতো ভোট পান। আরও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, যিনি নৌকা না পেয়ে প্রার্থী হন। তিনিও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পান।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত তিন জনের ভোট এক হলে সেখানে নৌকার জয় নিশ্চিত ছিল।

পরের বার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে একরামুল মনোনয়ন পান নোয়াখালী সদর আসনে। তার হাত ধরেই ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো আসনটিতে জয় পায় নৌকা। তিনি সেখান থেকে ভোট পান ১ লাখ ৩১ হাজার ৭০৬টি। বিএনপির মোহাম্মদ শাহজাহান ভোট পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৬টি। অথচ তার আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে ওই আসনে নৌকার ভোট ছিল ৮৩ হাজার ৯৯৮টি। ধারণা করা হয়, একরামের নেতৃত্বগুণই এর কারণ।

সদর আসনের সংসদ সদস্য হলেও নিজের এলাকা কবিরহাটে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে একরামের, যেটি ওবায়দুল কাদেরের সংসদীয় আসনে পড়েছে। সেখানকার নেতা-কর্মীরা তাকে চান কি না, সেটিও পরখ করেন একরাম।

বলেন, ‘আমার কি মনে ইচ্ছে করে না আমার নিজ এলাকার মানুষকে ভালোবসি? আপনাদেরকে ভালোবাসার জন্য দিছি, কই আপনারা ভালোবাসা দিচ্ছেন না। আপনারা যদি আমাকে নমিনেশন নেয়ার জন্য অনুমতি দেন তাহলে আমাকে হাত তুলে দেখান।’

এরপর উপস্থিত নেতা-কর্মীরা হাত তুলে জানান, তারা এই আসতে একরামুলকে চান।

পরে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে সদর আসনের এমপি বলেন, ‘আপনাকে বাবার পরে স্থান দিয়েছি। কিন্তু আপনি তো ধরে রাখতে পারেন নাই। আপনার আপন ভাই, তার কথায় আপনি আমাকে সাধারণ সম্পাদক থেকে বাদ দিয়ে দিলেন।

‘আমাকে বাদ দেন নাই। সারা নোয়াখালী আওয়ামী লীগ পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছেন। আজকে যাকে তাকে আহ্বায়ক বানিয়ে দিয়েছেন… আহ্বায়ক হয়ে শুধু বহিষ্কার, বহিষ্কার। আর কত বহিষ্কার করবেন।’

একরামুল ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ডিসেম্বরে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বিরোধের বিষয়টি বারবার সামনে আসে। কাদের মির্জার অভিযোগ ছিল, একরামুল সন্ত্রাসী পোষেণ এবং দুর্নীতিতে জড়িত, তাকে হারানোর চেষ্টা করছেন।

দুই পক্ষে নানা বাদানুবাদ সে সময় গণমাধ্যমের মুখরোচক সংবাদ হয়ে আসত, যদিও ভোটে কাদের মির্জার জয়ের পর সেসব আর আসেনি। পরে বিরোধটা কাদের বনাম এরকামুলে গিয়ে ঠেকেছে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নোয়াখালী জেলা কমিটি ভেঙে দেয়া হয়, গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এই নির্দেশ গেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে আর এর পেছনে একরামুল দায়ী করেন ওবায়দুল কাদেরকে।

জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে আ ন ম খায়রুল আনম সেলিমকে, যার সঙ্গে একরামুলের বিরোধ আছে আগে থেকেই। এই কমিটিতে একরামুলকে করা হয়েছে সদস্য।

একরামুল বলেন, ‘কবিরহাটের মানুষ আমাকে নেতা বানিয়েছে। আমার কী অপরাধ। আমাকে এভাবে অপমানজনকভাবে সরান হলো।

‘আমি নাকি ২৬টা খুন করছি, আমার ছেলে নাকি অস্ত্র নিয়ে চলে। কে এটা বলছে আমি বলতে চাই না। অথচ এ দেশে বিচার নেই।

‘কাদের ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগ করি, আমি মাইকের সামনে কিছু বলব না। কিন্তু আমার প্রশ্নটা হলো, আপনার স্ত্রীকে যে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলা হইছে, এটার বিচারও কি বাংলাদেশের মানুষ পাবে না?

নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন জিহান, কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার শিউলী, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Bootstrap Image Preview