সম্প্রতি রাজধানীর শনির আখড়া থেকে কল্যাণপুর যাওয়ার সময় বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন কলেজছাত্রী কাজী জেবুননেসা কামাল নেহা। এ সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে ছিলেন তার মা হালিমা খাতুন। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি ওই তরুণী ও তার মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইছেন। এরপরে লোকটি বাস থেকে তাড়াহুড়া করে নামার চেষ্টা করলে ওই তরুণী তাকে কলার ধরে মারছিলেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির টি-শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং তিনি বাস থেকে নেমে যেতে সক্ষম হন।
এই ঘটনার ২৭ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। কি ঘটেছিল সেখানে, কেনো ওই তরুণী লোকটিকে মারছিলেন, কেনো লোকটি তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছিলেন- এরকম নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।
গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণায় উঠে এসেছে- দেশে মোট তরুণীদের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ তরুণী গণপরিবহনে, ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ বাস বা বাসস্ট্যান্ডে এবং বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিংয়ের শিকার হন ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ তরুণী।
সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি এক হাজার ১৪ জন শিক্ষিত তরুণীদের ওপর এই জরিপ করে সংগঠনটি। জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণীদের ভেতর অবিবাহিত ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ও বিবাহিতের সংখ্যা ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বাকিরা আর সংসার করছেন না।
এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘সমাজের একটি অংশ হিসেবে নারীদের যতটুকু সন্মান বা মর্যাদা পাওয়া উচিত সেটা আধুনিক সময়ে এসেও আমাদের সমাজে এখনো নেই। ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি স্তরের নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে এখন যারা বড় বড় অবস্থানে আছেন তাদের উচিত এ বিষয়ে অনুজদের যথাযথ জ্ঞান দেওয়া। সমাজকে সবার জন্য সমানভাবে নিরাপদ জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে মেয়েরা একা বের হতে ভয় না পায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, ‘নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি তাদের পর্যাপ্ত মানসিক সমর্থন করতে হবে এবং বুঝাতে হবে যে জীবন এতো মূল্যহীন নয়। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই সাথে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সকলকে সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। গণমাধ্যমেও উঠে আসে বিষয়টি। একটি প্রতিবেদন শেয়ার দিয়েই পরীমণি তার মন্তব্য জানিয়েছেন ফেসবুকে। নারীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, বিশ্বাস করো এই বিচারটা সবসময় নগদে নিজেদেরই করা লাগবে। বাকিরা সব এমন নীরব ভূমিকায় থাকে আজীবন! শক্তিশালী হও মেয়েরা।