Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নারীরা শুধু ভোগের বস্তু না, সহযোদ্ধা: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১১ PM
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১১ PM

bdmorning Image Preview


নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইন থাকলেও মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নারীদের ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, দেখতে হবে সহযোদ্ধা হিসেবে।

ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে যেটা বেশি পীড়াদায়ক সেটা হল মেয়েদের ওপর সহিংসতা। যদিও আমরা আইন করে দিয়েছি। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন করে দিয়েছি, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি। পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন করে দিয়েছি।’

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইনি কাঠামো যথেষ্ট নয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু আইন করলে হবে না। মানসিকতাটা বদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। বিশ্বাসটা করতে হবে। নারীরা শুধু ভোগের বস্তু না, নারীরা সহযোদ্ধা। নারীরা সহযোগী, সহযাত্রায় চলতে হবে। সমান অধিকার দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবখানে নারী পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রমীলা ফুটবল দল গঠন করতে গিয়ে বাধার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অচলায়তন ভেঙে একবার যেতে পারলে আর কোনো বাধা আসবে না। আমাদের ইসলাম ধর্মে তো মেয়েদের অধিকার দেয়াই আছে। সেখানেই তো সমঅধিকারের কথা বলা আছে, কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশে কিছু তো এ ধরনের বাধা আসে, আসবেই। সেই বাধা অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

সন্তানের পরিচয়ে মায়ের নাম যুক্ত করতে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানের পরিচয়, সেখানে মায়ের নাম লেখা থাকত না। যে মা সন্তান ধারণ করে, জন্ম দেয়, সেই মায়ের নামটা থাকবে না, এটা কেমন হল কথা? এক্ষেত্রেও আমি ব্যবস্থাটা করে দিই।’

এ প্রসঙ্গে বেগম রোকেয়াকে উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “‘নর ও নারী উভয় মিলিয়ে একই বস্তু হয়। তাই একটিকে ছাড়িয়া অপরটি সম্পূর্ণ উন্নতি লাভ করিতে পারিবে না।’ কত গভীরভাবে তিনি চিন্তা করেছিলেন সেই যুগে একবার ভেবে দেখুন। আমরা এখন সেটাই মনে করি।”

বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার অনেকটা পূরণ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে, বিমান-হেলিকপ্টার এখন নারীরা চালাচ্ছে। আমাদের ট্রুপার আছে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের নারী অফিসার, পুলিশ, সেনা ও বিমানবাহিনীর মেয়েরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছে। তাদের চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। পুরুষরা যেটা পারে নারীরা তার চেয়ে আরও ভালো পারে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

এসময় ঠাট্টার ছলে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বেশি বলব না। কারণ দেখা যাবে পুরুষরা শেষে…আমার ভোট না কমে যায়। সেদিকে আবার লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ আমাকে ইলেকশন করে আসতে হয়। আমার সবদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

‘পুরুষশাসিত সমাজ আমরা বলি, কিন্তু মেয়েদের ছাড়া কী পুরুষ চলতে পারে? পারে না। মায়ের পেটে জন্ম নিতে হবে। বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখে বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকে। বৃদ্ধ হলে কন্যাসন্তানই বেশি দেখে, সে যত্ন নেয় বেশি।’

তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান জ্ঞানসম্পন্ন একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে চাই। আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। ইনশাল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলতে পারব। সেই আশা আমি পোষণ করি।’

পুতুলের জন্মদিন: এসময় নিজ কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিনে সবার কাছে দোয়া চান মা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সে অটিস্টিক এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। একসময় এই অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুরা জন্ম নিলে পরে বাবা-মা তাদেরকে লুকিয়ে রাখত, বলতে পারত না। যে মায়ের সন্তান, সেই জন্ম দিল কেন সেজন্য পরিবারে অনেক সময় লাঞ্চিত হতে হয়েছে। বিকলাঙ্গ শিশু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, অটিস্টিক শিশু জন্ম নিলে স্বামী তালাক দিয়ে দিয়েছে বা আরেকটা বিয়ে করেছে।’

সমাজের এই অচলাবস্থা ভাঙতে সায়মা ওয়াজেদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই শিশুদের লুকিয়ে রাখত, সমাজের সামনে আনতে চাইত না, লজ্জা পেতো। একটা বিরাট পরিবর্তন সায়মা ওয়াজেদ আনতে পেরেছে। সেটা হল, অটিস্টিক বা বিশেষচাহিদা সম্পন্ন শিশু হলে তাদেরকে আর লুকিয়ে রাখে না। বরং গর্বের সঙ্গে বলে।’

সামাজিক নিরাপত্ত বেষ্টনীর আওতায় প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সেনসাস রিপোর্ট হয়, সেই সেনসাস রিপোর্ট করবার সময় আমরা একটা কলাম করে দিয়েছি; এ ধরনের যারা আছে তাদের একটি তালিকা করতে। তাহলে আমরা জানতে পারব কোন কোন পরিবারে এ ধরনের শিশু বা মানুষ আছে। তাদের জন্য আমরা বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের মধ্যে যারা পড়াশোনা করছে তাদের শিক্ষাসহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। ট্রান্সজেন্ডারের উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

পুরস্কার পেলেন যারা: এ বছর বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী। নারী শিক্ষায় এ পদক জিতেছেন কুমিল্লার অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যশোরের অর্চনা বিশ্বাস ও পল্লী উন্নয়নে কুষ্টিয়ার গবেষক ড. সারিয়া সুলতানা।

সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণে ভূমিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদাও পেয়েছেন রোকেয়া পদক। আর নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় কুমিল্লার প্রয়াত শামসুন্নাহার রহমান পরাণকে দেয়া হয়েছে মরণোত্তর রোকেয়া পদক।

বিজয়ীদের প্রত্যেকে পেয়েছেন ৪ লাখ টাকার চেক, রেপ্লিকাসহ একটি ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক ও সম্মাননাপত্র।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সবার হাতে পদক তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

Bootstrap Image Preview