Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তামাক আইন সংশোধন করে দ্রুত সংসদে উপস্থাপন করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫০ AM
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫০ AM

bdmorning Image Preview


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে খুব শিগগির সংসদে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি। ৬ ডিসেম্বর, সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে 'বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং' আয়োজিত, '২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এ কথা জানান। এর পাশাপাশি তিনি ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্য বিক্রিতে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করার ব্যাপারে জোর দেন। 

বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে সেমিনারে পার্লামেন্টারি ফোরামের পক্ষ থেকে ৭টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সকল পাবলিক প্লেস, পাবলিক ট্রান্সপোর্টসহ সকল 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' বিলুপ্ত করা, বিক্রয়স্থলেও তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সকল স্পন্সরশিপ ও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৯০% এর বেশি রাখা, খুচরা ও কম সংখ্যক সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেটসহ সকল ধরণের হিটেড ট্যোবাকোর বিক্রি, আমদানি বন্ধ করা এবং ১৯৫৬ সালের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে তামাক পণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়া। 
ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,  'আমাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। তামাক থেকে আমরা যে রেভ্যিনিউ পাই তারচেয়েও অনেক বেশি খরচ হয় আমাদের চিকিৎসাখাতে। তাই তামাকমুক্তির কোন বিকল্প নেই। তবে একদিনে এগুলো বন্ধ করার উপায় নেই।  অনেকে বলেন তামাক সংশ্লিষ্টরা অনেক শক্তিশালী। তবে তারা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা তামাকের ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি।  আরও কমাতে হবে। আমরা খুব দ্রুত আপনাদের প্রস্তাবনা মোতাবেক আইনটি সংশোধন করে সংসদে আনবো। সংসদ সদস্যদের মাধ্যমেই তা পাশ হবে।'

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, 'সংশোধিত আইনে অবশ্যই স্মোকলেস ট্যোবাকো বন্ধের ব্যাপারে জোর দিতে হবে। এগুলো যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে। যারা ধূমপায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করছেন তাঁদেরকে নিয়ে সেমিনার করতে হবে। তাঁদের সমস্যাগুলো জানতে হবে। তাহলে গবেষণায় ফল পাওয়া যাবে। পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।' 

বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের নানান দিক নিয়ে কাজ করে। তার মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি সে বিষয় উল্লেখ করে বলেন, 'পার্লামেন্টারি ফোরামের পক্ষ থেকে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তামাক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে ১৫২ জন মাননীয় সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। সেখানেও মাননীয় অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছি, যেখানে আমাদের সাথে ছিলেন ৫২ জন সংসদ সদস্য। আমাদের অন্যতম অর্জন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও ই-সিগারেট নিষিদ্ধের বিষয়ে ১৫৩ জন মাননীয় সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছি।' 

ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, 'তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি এবং সুরক্ষায় তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ লাইসেন্স করতে হবে। জরিমানা বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে পাঠ্যবইতে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতার বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধূমপায়ীদের কাউন্সেলিং, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।' 
অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান এমপি বলেন, 'তামাক আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে যে ধারাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর সবই সঠিক। এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মহোদয় এবং সচিব একমত হলেই কাজটি করা সম্ভব।'  

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক জনাব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, 'সংসদ সদস্যবৃন্দ যেসব সুপারিশ জানালেন, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করবো। এছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পাশাপাশি তামাক উৎপাদনের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করতে হবে।' 

এসময় সংসদ সদস্যবৃন্দ তামাক চাষের বিকল্প ব্যবস্থা, তামাক কোম্পানির বাঁধা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি প্রস্তাবিত প্রতিটি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। 

এর আগে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। তিনি দেশের বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা এবং তামাকমুক্ত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়ে আলাপ করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় বিদ্যমান আইনের বিশ্লেষণ, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সংসদের উদ্যোগ, তামাক নিয়ন্ত্রণে বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে সফল অনুশীলনগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।

Bootstrap Image Preview