Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুরাদকে ক্ষমা চাইতে হবে: ছাত্রলীগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫৯ PM
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে প্রত্যাখ্যান করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা। তারা বলছেন, নারীর প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে মুরাদকে।

নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে আগে থেকেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এর মধ্যে একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে তোপের মুখে পড়েন তিনি।

তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার মধ্যে সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে এসে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এরপর রোববার রাতে আরেকটি লাইভেও আপত্তিকর বিভিন্ন মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও অশোভন উক্তি করেন মুরাদ।

প্রতিমন্ত্রী মুরাদ বলেন, ‘এরা আবার জয়বাংলার কথা বলে। এরা আবার ছাত্রলীগ করছে নাকি। এরা নাকি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল হলের। কেউ কেউ বলে শামসুন নাহার হল, কেউ কেউ আবার রোকেয়া হল, বিভিন্ন হলের নাকি নেত্রী টেত্রী ছিল।

‘কিন্তু রাতের বেলায় এরা নিজেদের রুমে থাকতেন, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে। কারণ ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা আর রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হলে থাকা, এটা কি এক কথা?’

তিনি বিদ্রূপের স্বরে আরও বলেন, ‘আমি এর থেকে বেশি বললে আপনার এই শো শেষ হইতে না হইতেই মিছিল শুরু হয়ে যাইতে পারে কিন্তু…’ এরপর উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন মুরাদ।

রোববার রাতের লাইভটি প্রতিমন্ত্রীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি নাহিদ রেইনসের পেজ নাহিদ রেইনস পিকচার্সেও যে ভিডিওটি আছে, সেখান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের বক্তব্য।

মুরাদের এসব বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি এবং কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে। যেই বঙ্গবন্ধু নারীদের এতো উপরের আসনে আসীন করেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর নামে রাজনীতি করে যদি কেউ নারীদের নিয়ে কটূক্তি করে এ ধরনের মন্তব্য করে সে আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসই করে না।'

বঙ্গবন্ধুর প্রতি যাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আছে তাদের কেউ প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে সমর্থন করতে পারে না বলে মনে করেন তিলোত্তমা। তিনি বলেন, ‘জাতির সামনে এসে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি উনাকে তার এই বক্তব্য উঠিয়ে নিতে হবে।’

তিলোত্তমা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্বের আলেকবর্তিকা নিয়ে সারা বিশ্বে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীও নারীর প্রতি এ ধরনের কোন বক্তব্যকে প্রশ্রয় ও সমর্থন করবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি।’

গণমাধ্যমে এসে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগ শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা।

নিজের ফেসবুকে লেখা স্ট্যাটাসে এই ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা কোন ব্যক্তির মুখের ভাষার এই শ্রী শুনে মনে হচ্ছে আমরা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। এসব নিয়ে কথা বলার রুচি আসলেই নাই। কিন্তু ডোন্ট কেয়ার মুডে থাকলে বা নীরব থাকলে সমাজের অতি বুঝদার শ্রেণী মনে করে অপরাধী, তাই হয়ত চুপ মেরে আছে।’

এসব প্রসঙ্গে কথা বলা উচিত বলে মনে করেন জিয়াসমিন শান্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদেরই বলতে হবে; নয়তো এসব ফালতু লোকের মুখ দিয়ে বের হওয়া বিষে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এই লোক এতবড় স্পর্ধা নিয়ে কথা বলে যদি বহালতবিয়্যতে থাকে তাহলে দলের সবাইকে বলছি-রাজনীতি করা একটি মেয়েও যদি নৈতিক, চরিত্রবান থেকে থাকে তার দীর্ঘশ্বাস থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।’

শান্তা বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী সাহেব, চাওয়া বা যোগ্যতার চেয়ে বেশি পেয়ে গেছেন। তাই হজম না হয়ে বদহজম হওয়াতেই এসব কথাবার্তা বলছেন। আপনার রিহ্যাবে যাওয়া উচিত।’

প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে ‘সাইকো’ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর বাতুল লোক সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পদে থাকার যোগ্য নয়। তার যে মুখের ভাষা সে মুখে পবিত্র জয়বাংলার কথা শুনলে লজ্জা, ঘৃণা ও ক্রোধ হয়।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য ফরিদা পারভিন বলেন, ‘মুরাদ হাসানের এমন বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের নিয়ে যে অশোভন এবং নারী বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করেছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার বা সংস্কৃতি না বুঝে, তিনি হলে না থাকার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন এটির আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মাননীয় নেত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, তার বিরুদ্ধে যেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

এদিকে নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সোমবার বিকালে ক্যাম্পাসে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের কুশপুতুলে আগুন দিয়েছে।

সূত্র: নিউজ বাংলা

Bootstrap Image Preview