Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি জেলেদের ট্রলারে ভারতীয়দের গণডাকাতি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৫১ AM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৫১ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় অন্তত ১০টি ট্রলারে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে মুসা (৩০) নামে এক জেলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক। জেলেদের দাবি, ডাকাতরা ভারতীয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ডাকাতির ঘটনা ঘটায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জেলেরা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় ভারতীয় ডাকাত দল এ তাণ্ডব চালিয়েছে বলে জানান তিনি। নিহত জেলে পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরলাঠিমারা গ্রামের হারুন মিয়া ছেলে। তিনি তার চাচা বাবুল ফকিরের ট্রলারে প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। সকাল ৭টায় পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে নিয়ে এলে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন সেখানে আসেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ জলসীমায় কোনো জলদস্যু নেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়ে সংসদ সদস্য রিমন জানান, ভারতীয় ডাকাত দল দেশি কিছু ডাকাতকে নিয়ে সঙ্গবদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করেছে। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় দেশি ডাকাতরা সঙ্ঘবদ্ধ হতে না পারায় ভারতের ডাকাতদল সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল হোসেন ফরাজী জানান, বাবুল ফকির, বাদল মোল্লা, আনোয়ার হোসেন, আবদুর রহমান ও মুসার মালিকানাধীন ট্রলারসহ অন্তত ১০টি ট্রলারে মঙ্গলবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণডাকাতি করে ভারতীয় ট্রলারে আসা সে দেশের জলদস্যুরা। তারা মাছ, জাল-দড়ি, তেল, ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশসহ যাবতীয় রসদসামগ্রী লুটে নিয়ে যায়। এ সময় মুসা নামে এক জেলেকে গুলি করে মেরে ফেলে এবং শতাধিক জেলেকে বেদম মারধর করে আহত করে।

মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাছ শিকার করে উপকূলে ফেরার পথে হঠাৎ ভারতীয় একটি ট্রলারে করে ২৫ থেকে ৩০ জন ভারতীয় ও দেশি ডাকাত একযোগে এফবি বাবুল ট্রলারে হামলা করে ট্রলারে থাকা সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ট্রলার মালিকের ভাইয়ের ছেলে মুসা বাধা দিলে তাকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে ডাকাত দল। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও অন্য জেলেদের বেদম মারধর করে। এ সময় তারা অন্তত ১০টি ট্রলারে ডাকাতি করে।

ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, যদি দেশি ডাকাতরা ডাকাতি করত তা হলে জেলেদের ধরে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করত। যেহেতু জেলেদের মারধর করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে গেছে এতে এটা নিশ্চিত, ডাকাতরা ভারতীয়।

ট্রলার মালিক বাবুল ফকির বলেন, দ্রুত গতিসম্পন্ন বিশাল আকৃতির ভারতীয় ট্রলারে মুখোশ পরা অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ জন ডাকাতকে দেখতে পেয়েছি। এর মধ্যে দুয়েকজন বাংলায়, বাকি সবাই হিন্দিতে কথা বলেছে।

ডাকতের গুলিতে নিহত জেলে মুসার স্ত্রী তাজেনুর বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য রওনা দেয় তার স্বামী। জেলেপেশায় নিয়োজিত থাকলেও স্থানীয় নদ-নদীতে মাছ শিকার করত। নদ-নদীতে তেমন মাছ না থাকায় সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে ডাকাতের গুলিতে মারা গেছে সে। তাওহিদুল ইসলাম নামে পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে মুসা-তাজেনুর দম্পতির।

সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিহতের পরিবারকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া গভীর সাগরে নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠানোর জন্য সংসদে দাবি উত্থাপনেরও আশ্বাস দেন তিনি। 

পাথরঘাটা থানার ওসি আবুল বাশার জানান, মুসার মৃতদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা করা হবে।

Bootstrap Image Preview