Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতিরক্ষা ক্রয়ে চুক্তি, ইন্দো-প্যাসিফিকে অভিন্ন অবস্থান ব্যক্ত

হাসিনা-ম্যাক্রোন বৈঠক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৩ AM
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৩ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে ফ্রান্স। মঙ্গলবার প্যারিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোনের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা-প্যারিস সম্মতিপত্র সই হয়েছে। ওই পত্রে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয় রয়েছে। একই সঙ্গে এ খাতে সহযোগিতায় নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানে সম্মত হয়েছে উভয়ে।

শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে- দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে। এখন থেকে এ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী একপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্য পক্ষ যে কোন সরবরাহে সহযোগিতা করবে।

বৈঠকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ফ্রান্সের অবস্থানকে বাংলাদেশ সমর্থন করে বলে জানানো হয়েছে। প্রায় ২২ বছর পর অনুষ্ঠিত পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন প্যারিসে রয়েছেন।

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে তিনি প্যারিস পৌঁছান। সফরের প্রথম দিনেই ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন এবং প্রধানমন্ত্রী জঁ কাসতেক্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠক হয়। ব্যাক টু ব্যাক ওই বৈঠকের পর ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, "আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সবার সমৃদ্ধির জন্য একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ফ্রান্স এবং বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন। ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কিত কৌশল নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতি বলা হয়, উভয় পক্ষই আঞ্চলিক শান্তির উন্নয়নে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

একই সঙ্গে স্থিতিশীলতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং ব্লু-ইকোনমিতে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণের বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। সমুদ্র বিষয়ক ১৯৮২ সালের জাতিসংঘ কনভেনশন সম্পূর্ণভাবে পালন করার প্রতি উভয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, পাশাপাশি যে কোন বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি এবং হুমকি বা বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণে সম্মত হয়েছে উভয়ে। সমুদ্র নিরাপত্তা এবং অবধ নৌ-চলাচল এবং ওভারফ্লাইটের স্বাধীনতা বজায় রাখার নীতিকে সমর্থন করেছে উভয় দেশ।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোনের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বাংলাদেশের সরকার প্রধানের অফিসিয়াল ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নীত করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়েও। আগামী বছর ঢাকা-প্যারিস কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। বৈঠকে উভয় পক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ফ্রান্স সরকার এবং দেশটির জনগণের মূল্যবান সমর্থনের কথা স্মরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের তরফে দুর্দিনের ওই সমর্থনের জন্য ফ্রান্সের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স উভয়ে বন্ধুত্বের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং বিকাশে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কের কৌশলগত দিক-নির্দেশনায় এখন থেকে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনে ঐকমত্য হয়েছে। বলা হয়েছে- সংলাপেই অংশীদারিত্বের সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে। শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশ রাজনীতি, কূটনীতিসহ সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ পারস্পরিক টেকসই এবং বাস্তব সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে একে অন্যকে সহযোগিতায় অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স নিজ নিজ প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা উপাদানকে আরও উন্নত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, এ খাতে অংশীদারিত্ব বাড়াতে উভয় দেশই সংলাপের ওপর জোর দিয়েছে। বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে বিশেষ করে প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র ফ্রান্সের সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে প্রতিরক্ষা খাতের পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে সই হওয়া সম্মতিপত্রকে উভয়ে স্বাগত জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

স্মরণ করা যায়, ক'বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো বিশেষ করে জঙ্গি বিমান রাফাল বিক্রির চেষ্টায় রয়েছে ফ্রান্স। গত বছর ঢাকায় এসে দাসো রাফাল বিক্রির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্ল। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে রাফাল নিয়ে কথাা না হলেও কূটনৈতিক সুত্রগুলো ধারণা দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈঠকে সমরাস্ত্র বিক্রি তথা জঙ্গী বিমান রাফাল বিক্রির বিষয়টি আসতে পারে।

Bootstrap Image Preview