Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আতঙ্কে কক্সবাজার ছেড়েছেন হাজারো পর্যটক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২১, ০২:৪৮ PM
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২১, ০২:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দেশের শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন হোটেল ও মোটেল মালিকরা। অবস্থার অবনতি ঘটলে আসন্ন শীতে ভ্রমণ মৌসুমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

কক্সবাজারের মেয়র মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে রোববার রাতে বিক্ষোভ করেন পৌরসভার শ্রমিক-কর্মচারীরা। পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কায় সোমবার পর্যন্ত হাজারো পর্যটক এ পর্যটন নগরী ছেড়েছেন।

কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধা পয়েন্টে একটি জমির দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোনাফ সিকদারের মধ্যে।

২৭ অক্টোবর রাতে নগরীর সুগন্ধা পয়েন্টে গুলিবিদ্ধ হন মোনাফ সিকদার। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোববার দুপুরে তার ভাই শাহজাহান সিকদার বাদী হয়ে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন।

এ মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে পৌরসভার কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে। রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার কাউন্সিলর থেকে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী সড়কে অবস্থান নেন।

হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ-কটেজ, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "গত ২৭ অক্টোবর প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলির ঘটনার কারণে এমনিতেই পর্যটকরা আতঙ্কিত। এছাড়া, রোববার রাতে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ ও অনাকাঙিখত পরিস্থিতির কারণে যারা আরও কয়েকদিন এখানে থাকার জন্য বুকিং দিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই সোমবার রুম ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। আবার সোমবার কক্সবাজারে আসার জন্য বুকিং দেওয়া অনেক পর্যটক তাদের অগ্রীম বুকিং বাতিল করেছেন।" এ কারণে পর্যটন জোনের হোটেল-গেস্ট হাউজগুলো প্রায় খালিই বলা চলে।

তার মতে, হোটেল-মোটেল জোনের আবাসিক হোটেলের প্রায় ১০ হাজার কক্ষ সোমবার খালি পড়ে ছিল। ফলে, গড়ে প্রতি রুম ২,৫০০ টাকা ভাড়ায় একদিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা রুম ভাড়ার ক্ষতি হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের।

আবুল কাসেম আরও বলেন, "কক্সবাজারে অবস্থানকালে রেস্তোরাঁয় খাবার, বিভিন্ন পর্যটন পণ্য ক্রয়সহ অন্যান্য খরচও করতেন এসব পর্যটকরা। এর থেকে দৈনিক প্রায় কয়েক কোটি টাকা আয় হতো। বর্তমানে এই আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীরা"।

ফাইভ স্টার গেস্ট হাউস জলতরঙ্গের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান নিজাম উদ্দিন আল সুমন বলেন, "আমরা সবাই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। পৌরসভার কর্মীদের আকস্মিক ভাংচুরের ফলে রোববার যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারসহ পর্যটকরা জিম্মি হয়ে পড়ে"।

এদিকে সোমবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পৌরসভার কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পৌরসভার সেবাপ্রার্থীদের।

একজন সেবাপ্রার্থী আরাফা বেগম বলেন, "আমি তিন মাস অপেক্ষার পর মেয়ের জন্ম সনদ সংশোধন করতে পৌরসভায় আসি। আজ (সোমবার) সেই সনদ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে পৌরসভা অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি আমি।"

পৌরসভা কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

অবশেষে বিকেল ৩টার পর পৌরকর্মীরা পুনরায় সেবা প্রদান শুরু করেন।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন।

এর আগে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, প্রশাসনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকেই এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, কক্সবাজারের পাশাপাশি সোমবার মহেশখালী পৌরসভার সেবাও বন্ধ করে দেন মেয়র মাকসুদ মিয়া। কক্সবাজারের মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ পদক্ষেপ নেন তিনি।

মহেশখালীতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসলেও সোমবার কোনো পর্যটক আসেনি বলে জানান একাধিক ট্যুর অপারেটর।

এ পরিস্থিতিতে রোববার বিমানযোগে কক্সবাজার যান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। সোমবার তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত কক্সবাজার বাস স্টেশনে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকাগামী পর্যটকরা।

"আজ পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তবে দেশের বৃহত্তম পর্যটন শহরের জন্য এটি অপ্রত্যাশিত," বলেন তিনি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদের দাবি, রোববারের ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে শহর থেকে কোনো পর্যটক ফিরে আসেননি কিংবা হোটেল বুকিং বাতিল করেননি। পর্যটকদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, বলেন তিনি।

Bootstrap Image Preview