মাদক মামলায় গ্রেফতার চিত্রনায়িকা পরীমণি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আর দশজনের মতো ফেরেননি। ফিরেছেন অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে, নিজ স্টাইলে। জেলগেটেই ভক্তকুলের সাক্ষাৎ।
একটু এগিয়ে মুক্ত হাওয়ায় সেলফি তোলা আর ডান হাতে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ আঁকা নিয়ে। তার মুক্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছিলেন যারা তারা বলছেন, এটা আরও শক্তিশালী ইমেজ আকারে পরীকে দাঁড় করাবে। তাকে যারা ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন এটা তাদের প্রতি বার্তা।
দীর্ঘ ২৭ দিনের জেলজীবন শেষ করে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) ৯টা ৩৭ মিনিটে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানান। এসময় তার ডান হাতে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ আঁকা দেখা যায়। তিনি কারাগারের জীবনের ‘লোকলজ্জা’, ‘বিষণ্ণতা’ কিছুকে পাত্তা না দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে।
সকাল ৯টা ২১ মিনিটে আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীর কাছে তাকে হস্তান্তর করেন কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ। পরে ৯টা ৩৭ মিনিটে বের হন। পরীমণিকে নিতে কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন তার খালু মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
শুরু থেকে পরীমণির পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন অ্যাক্টিভিস্ট শ্বাশ্বতি বিপ্লব। তিনি বলেন, পরীমণি এজন্যই সবার থেকে আলাদা। তার বেরিয়ে আসার যে ইমেজ সেটা শক্তি যোগাবে। মিডিয়াতে নারীদের যে স্ট্রাগল, সেখানে ভুক্তভোগীরা সাহস করে চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করতে পারে না। পরীমণি তাদের পথ দেখাবেন।
আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি বলেন, পরীমণিকে যতটা সাধারণ ভাবা হয়েছিল ততটা সাধারণ যে তিনি নন। আর সেটা প্রমাণিত হয় তার ইস্কুল-পাঠ থেকে আজকে তার জেল থেকে বেরিয়ে আসা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে নজর দিলে। তাকে আমরা কেবলমাত্র ঢাকাই চলচ্চিত্রের একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে দেখলে ভুল করবো। আজকে তিনি যেভাবে যে চেহারায় জেল থেকে বেরিয়ে এলেন তাতে মনে হলো তিনি ২৬ দিন কারাগারে থেকে আসলে নতুন করে শক্তি লাভ করেছেন। সত্যিইতো তার সঙ্গে যে অনাচারটি হয়েছে এর বেশি আর কী হওয়া সম্ভব?
তিনি আরও বলেন, একজন নারী হিসেবে কেবল নয় নাগরিক হিসেবে তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, ফলে সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি যেভাবে লড়ছেন তা আমার মতো অনেককেই বিস্মিত করেছে। যখন তার পূর্ববর্তী প্রজন্মের অভিনয় শিল্পীদের কেউ কেউ রাতের বেলা ঘর থেকে না বেরুনোর পরামর্শসহ নারীকে ঘরবন্দি থাকার পরামর্শ ফেরি করছেন তখন পরীমণি একা নিজের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। দুঃখজনক সত্য হলো, মিডিয়া এখানে অনেকটাই নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, যা কাম্য ছিল না। পরীমণি নিশ্চয়ই তার স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরবেন। মাঝখানে এই সময়টা তার জন্য এবং এদেশের নারীর জন্য একটি কালো দৃষ্টান্ত হয়েই থাকলো, এটা কষ্টের খুব।
উল্লেখ্য, গত ১৯আগস্ট পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। এর আগে গত ১০ আগস্ট পরীমণি ও আশরাফুল ইসলাম দীপুর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। তার আগে ৫ আগস্ট পরীমণি ও দীপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমণির জামিন আদেশ দেন। তিন কারণ বিবেচনায় পরীমণিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। যেহেতু পরীমণি একজন চিত্রনায়িকা এবং একজন নারী। তাছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রীতিলতা নামক একটি চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের শিডিউল চলছে। এসব বিষয় বিবেচনায় তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন আদালত।
মাদক মামলায় গত ১৩ আগস্ট পরীমণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। কারা সূত্র জানায়, পরীমণিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে (রজনীগন্ধা ভবন) রাখা হয়।