Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিমানের অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২১, ০৯:০৯ AM
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২১, ০৯:০৯ AM

bdmorning Image Preview


রহস্যজনক কারণে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভারের বিল পরিশোধ না করায় শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল বিমানের অনলাইন টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম ‘বিমান ড্যাস এয়ারলাইন্স ডটকম’। এই অবস্থায় দেশে বিদেশে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিমান যাত্রীরা। 

করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে যখন দেশ-বিদেশের বিমান যাত্রীদের টিকিটিংয়ের একমাত্র ভরসাই অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম, সেখানে বিমানের এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইটটি বন্ধ হওয়ায় তোপের মুখে পড়েছে বিমানের শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট।

গত দুই বছর ধরে অনলাইন ওয়েব সার্ভারের বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছে অ্যামাজন ওয়েব কর্তৃপক্ষ। এতে অনলাইনে বিমানের টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

অ্যামাজন গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিমানের সার্ভার বন্ধ করে দেওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরমে টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইটটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে বিমানের সব দেশি-বিদেশি সেলস অফিস, অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি ও বিমান কল সেন্টারের মাধ্যমে সব রুটের টিকিট ক্রয়, পরিবর্তন ও ফেরতের প্রক্রিয়া চালু আছে। যাত্রীদের সেবা দিতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে বিমানের প্রধান কার্যালয়ের সেলস সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

সার্ভার বন্ধ প্রসঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, এ নিয়ে বিমানের আইন বিভাগ কাজ করছে। লিগ্যাল ওপিনিয়ন পেলে ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সার্ভার বন্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিক যদি সাময়িক কিছু ক্ষতি হয় সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

বিমানের আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্ভার বন্ধ থাকলে একযোগে অচল হয়ে পড়বে বিমানের সব ধরনের অনলাইন টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। এতে হুমকির মুখে পড়বে বছরে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকার অনলাইন টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। তাদের অভিযোগ, বিমানের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অত্যাধুনিক অনলাইন টিকিট বুকিং ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রির প্রাচীনতম ব্যবস্থা চালু রাখার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি চক্র। তাদের কারসাজিতেই অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই অনলাইন ব্যবস্থাকে সাময়িকভাবে বন্ধের মতো জটিলতার মুখে ঠেলে দেওয়া হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টিকিট বিক্রি ছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে যাত্রীরা ঘরে বসে রিফান্ড, রি-ইস্যু, সিট সিলেকশনসহ নানা সুবিধা পাচ্ছিলেন। এতে দিন দিন বাড়ছিল অনলাইনের কদর। কিন্তু বিমানের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই অনলাইন মার্কেটিংয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সিন্ডিকেটটি সচল ও সফলভাবে বাস্তবায়িত সফটওয়্যারটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসার্ভার, গুগল প্লে-স্টোর, অ্যাপল অ্যাপস্টোরের কোনো বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি। উলটো সিন্ডিকেট অন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকায় আরেকটি ই-কমার্স সফটওয়্যার কেনার পাঁয়তারা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিগিগর এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে—এমন প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে।

এ প্রসঙ্গে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক বোর্ড মেম্বার ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমান তাদের প্রতিষ্ঠিত ও সফল ই-কমার্সকে কৌশলে বাদ দেওয়ায় পাঁয়তারা করছে। পাশাপাশি কমিশন ভাগাভাগি করতে নতুন ই-কমার্স সাইট কেনার চিন্তাভাবনা করছে। বিষয়টি রহস্যজনক এবং এর পেছনে অন্য কোনো ধান্দা থাকতে পারে।

এদিকে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনলাইন মার্কেটিংয়ের বদলে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) নির্ভরতা বাড়ালে একটি চক্রের বিপুল অঙ্কের লাভ। সর্বশেষ দুবছর আগেও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ভুয়া টিকিট বুকিং এবং সেই বুকিং বাতিল করে চারটি গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) কোম্পানি বিমানের কাছ থেকে এক বছরে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ভয়াবহ লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে।

Bootstrap Image Preview