নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুনে ৫২ জন নিহতের ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
রোববার (০৮ আগস্ট) রাতে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে কারখানার মালিকের অনিয়মসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার গাফলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এ ব্যপারে কোনো কথা বলেননি তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাতের কারণ হিসেবে কারখানার নিচতলার সেন্ট্রাল রুমে শর্টসার্কিট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ঘটনার নেপথ্যে কারখানা মালিকের বহু অনিয়ম ও সরকারি সংস্থার গাফিলতির বিষয়টি কঠোরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেজান জুস কারাখানাটি তৈরির সময় ভবন নির্মাণের কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। পাশাপাশি কারখানাটিতে ছিল না পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা ফায়ার সার্ভিসের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি)। সেইসঙ্গে ফায়ার সেফটিও ছিল না। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় একটি অনিয়মের মধ্যে ছিল শিশুশ্রম। এসব অনিয়মসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কারখানার মালিকের অনিয়ম পাওয়া গেছে তদন্তে।
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, এ ধরনের কারখানাগুলোতে শিশুশ্রম বন্ধ করা, যারা মারা গেছে তাদের শ্রম আইন অনুসারে ২ লাখ টাকা এবং যারা আহত হয়েছে তাদের আড়াই লাখ টাকা করে মালিক পক্ষ থেকে দিতে হবে, বিল্ডিং কোড মানা, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র আরও বেশি রাখা এবং প্রশিক্ষিত অগ্নি নির্বাপণ দল কারখানায় রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জের হাসেম ফুডের সেজান জুস কারখানায় লাগা আগুনে ৫২ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে ৪৯ জন এতটাই পুড়ে গিয়েছিলেন, তাদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। ওই দিনই আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি হাসেম ও তার চার ছেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গত ১৫ জুলাই মামলার তদন্ত ভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।