Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২১, ০৬:৫৪ PM
আপডেট: ২৬ জুন ২০২১, ০৬:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


করোনার ধাক্কায় আয় সংকুচিত হয়েছে বহু মানুষের। তবে সংকটকালের এই অভিঘাত এখানেই থেমে নেই। অর্থনৈতিক দুর্দশা ভাঙন ধরাচ্ছে বহু সংসারেও। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে।

ঢাকার দুই সিটির তথ্য বলছে, ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে চার হাজার ৫৬৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে এক হাজার ১৪১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪২। এই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে বেড়েছে ৯৯টি বিচ্ছেদ। গত বছরও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেওয়া হয়েছে, ৭০ শতাংশ।

করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক চাপের কারণে সৃষ্ট পারিবারিক কলহ ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল, পারস্পরিক বোঝাপড়া না হওয়াও বড় কারণ। নারীদের পক্ষ থেকে বেশি ডিভোর্স দেওয়ার পেছনে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিকেই প্রধানত দায়ী করছেন তাঁরা।

বিচ্ছেদের প্রবণতা শুধু ঢাকায়ই নয়, সারা দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে। মহামারিকালে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, পুরুষরা বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মূলত তাঁদের প্রতি স্ত্র্রীর সন্দেহপ্রবণতা, সংসারের প্রতি স্ত্র্রীর উদাসীনতা, বদমেজাজ, সন্তান না হওয়া ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। নারীরা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন পরকীয়া প্রেম, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি।গত বছর দুই সিটিতে ১২ হাজার ৫১৩টি ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আট হাজার ৪৮১টি আবেদন করেছিলেন নারী, বাকি চার হাজার ৩২টি বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন পুরুষ।ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দপ্তরে তালাকের আবেদন নথিভুক্ত করা হয়। আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে দুই পক্ষ আপস অথবা প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বেশির ভাগ তালাক দিচ্ছেন নারীরা। দুই সিটিতেই ৭৫ শতাংশ তালাক নারীরা দিচ্ছেন। করোনার মধ্যে পারিবারিক বোঝাপড়া নিয়েই মূলত তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে। পাশাপাশি নারীরা এখন বেশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাই তালাকের পর কিভাবে চলবেন, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। সমাজও এখন মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে শুরু করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়ে গেছে। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদও করছে। স্বামী অথবা পরিবার কর্তৃক শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। নারীর ক্ষমতায়নের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও উপার্জনক্ষম নারী বাড়ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি শুধু কারণ নয়, আদর্শিক চিন্তার পরিবর্তনও একটা বড় কারণ। এ জন্য নারীরা সাহস করে তালাক দিতে পারছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো বিশ্বাস করা হয় যে সব কিছুর সঙ্গে মেয়েরাই মানিয়ে নেবে, কিন্তু এটা দুজনের বিষয়। এখানে ডমিনেট (আধিপত্য) করার বিষয়টাকে আর মেনে নেওয়া হচ্ছে না। মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, ফলে আত্মসম্মান বোধটাও বেড়েছে। তাই সব সময় নির্যাতনের কারণেই তালাক দিচ্ছে না।’ নারীদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়াও অন্যতম কারণ বলে মত দেন তিনি।

Bootstrap Image Preview