Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এলএসডিতে কেউ আসক্ত কি না কীভাবে বুঝবেন?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২১, ১১:৫৯ AM
আপডেট: ০৪ জুন ২০২১, ১১:৫৯ AM

bdmorning Image Preview


মরণ নেশা ইয়াবা থেকেও অনেক বেশি ভয়াবহ আগ্রাশন রয়েছে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইডের (এলএসডি) নতুন এই মাদকে। পশ্চিমা বিশ্বে এই মাদক প্রচলনের কথা শোনা গেলেও বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন।এলএসডি মাদক সেবনে কল্পনাশক্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এর ফলে মানুষের মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রচণ্ড পরিমানে চাপ পড়ে এবং ভেঙে পড়ে’।

পশ্চিমা বিশ্বের মত বাংলাদেশও এই মাদকের বাজার তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে কুচক্রি কয়েকটি গ্রুপ।   সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগ ও গোয়েন্দা (রমনা) বিভাগ দুটি অভিযান চালিয়ে এলএসডি মাদকের বাজার তৈরি, বিক্রি ও সেবসের দায়ের ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে, গ্রেফতার হওয়া সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এই ঘটনার তদন্তের জেরে পুলিশ আরো যেসব তথ্য দেয় তা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চক্র এই মাদক কেনাবেচার সাথে জড়িত। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই মাদক বিক্রির তথ্যও জানানো হয়।

এদিকে মাদক বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে।

এলএসডি আসলে কী? লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডি এক ধরনের তরল। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই তরল মাদক ফেলে সেই কাগজ শুঁকে নেশা করেন মাদকাসক্তরা। এলএসডি মাখা কাগজের এক-একটি ছোট টুকরো বা ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা। ডিবির হাতে গ্রেফতাররা জানায়, প্রতিটি ব্লটিং পেপার তিন থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।

১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে, ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে পরে এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এই মাদক এতটাই শক্তিশালী যে ডোজগুলো মাইক্রোগ্রাম পরিমাণে নিতে হয়। এটি গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং কিছুটা তেতো স্বাদের হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ এবিউজের (এনআইডিএ) তথ্যানুযায়ী, এলএসডি আমেরিকায় নিষিদ্ধ। এর কোনো মেডিক্যাল ব্যবহার নেই, অর্থাৎ নেশাদ্রব্য হিসেবেই এটি তৈরি হয়।

এলএসডির প্রতিক্রিয়াঃ  বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকটা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে। এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। শোনা যায়, নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ কেউ মাতৃগর্ভের স্মৃতিও মনে করতে পারেন। তবে, সেসব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ।

কেউ যদি অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি এলএসডি'র আসক্তিতেও ভোগেন তাহলে তার মধ্যে নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

১. অস্বাভাবিক আচরণঃ জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী বলেন, এলএসডি গ্রহণের পর এর কার্যকারিতা সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। তবে অনেক সময় এটি ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও কার্যকর হতে পারে।

তিনি বলেন, এই সময়ে ব্যবহারকারীরা নানা ধরণের অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। অনেক সময় মানুষ আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। এ ধরণের বৈশিষ্ট্য যদি পরিবারের কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, যারা এলএসডি-তে আসক্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে খুব ছোট ঘটনায়ও সহিংস হয়ে উঠতে পারেন তারা।

২. ক্ষুধামন্দাঃএলএসডিতে আসক্ত হলে তাদের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় বলে জানান মি. চৌধুরী।

৩. ঘুমের সমস্যাঃ ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর তথ্য অনুযায়ী, এলএসডিতে আসক্তদের মধ্যে ঘুম নিয়ে ব্যক্তিভেদে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেকের মধ্যে চরম মাত্রায় অনিদ্রা দেখা দেয়। তবে মি. চৌধুরী জানান, অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমের বৈশিষ্ট্যও দেখা দেয়। কোন ধরণের কারণ ছাড়াই ঘুমাতে থাকেন অনেকে।

৪. শারীরিক পরিবর্তনঃ এলএসডি-তে আসক্তদের যেসব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার মধ্যে রয়েছে, চোখের মণিতে পরিবর্তন বিশেষ করে বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

এছাড়া এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলেও জানান তিনি। এ কারণেই অনেক সময় যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে গান করেন তারা এই মাদক গ্রহণ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য মতে, এলএসডি গ্রহণের কারণে দেহে অতিরিক্ত ঘামও হয়ে থাকে।

৫. জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ মাদকে আসক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রায় নানা ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি হয়তো কারো সাথে মিশতে চাইছেন না বা বন্ধু বান্ধবের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়।

অনেক সময় আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। আগের বন্ধুদের সাথে না মিশলেও নতুন করে বন্ধুও তৈরি হতে পারে। আর্থিক চাহিদা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দেয়া, ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে পারে।

মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম ইমদাদুল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তানরা বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে পড়ছে বা তারা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই একাকী হয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে এলএসডির মতো আসক্তি ধরাটা কঠিন। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সন্তানের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে।

ঘুমের সমস্যা বা খাবারের অরুচি, নতুন বন্ধু তৈরি মানেই কেউ মাদকাসক্ত নয়। সন্তানদের প্রতি যাতে বাবা-মা অযাচিতভাবে সন্দেহের আওতায় নিয়ে না আসে সেদিকেও লক্ষ্য রাখাটা জরুরি। আর এ কারণেই বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে।

Bootstrap Image Preview