সাতক্ষীরায় রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে ৪ মাসে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন ১৩৭৫ জন। শহর ঘুরে দেখা যায়, কলেজ মোড়, ফুড অফিসের মোড়, পোস্ট অফিসের মোড়, জুবলি স্কুল মোড়, নবারুণ স্কুল মোড়, পিটিআই মোড়, পলাশপোল স্কুল মোড়, সুলতানপুর বাজার, ইটাগাছা, কামালনগর, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, আনন্দপাড়া, শিবতলা মোড়, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনী, থানাঘাটা, মিল বাজার এলাকায় কুকুরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি।
এর মধ্যে ফুড অফিসের মোড় ও পোস্ট অফিসের মোড় এলাকায় দল বেঁধে ১৫ থেকে ২০টি কুকুর ঘোরাঘুরি করে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যা নামলে এদের উত্তেজনা বেড়ে যায়। পথ আটকে কামড়ে দিতে আসে পথচারীদের। কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র তরুণ মন্ডল কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। এরপর থেকে রাস্তায় বের হতে আতঙ্ক লাগে তার।
তরুণ মন্ডল বলেন, গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় সদরের ফুড অফিস মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি কুকুর তার দিকে তেড়ে আসে। এ সময় দৌড়ে পালাতে গেলে একটি কুকুর হার পায়ে কামড়ে দেয়। তখনই সদর হাসপাতাল গিয়ে র্যাবিস টিকা নিয়েছেন তিনি।
সন্ধ্যার পর কুকুরের কামড় খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সদরের পরানদাহ গ্রামের ধান কাটার শ্রমিক মুজিবুর রহমান, আজিবার হোসেন ও আনিস গাজী। ঈদের এক সপ্তাহ আগে শহরের সার্কিট হাউজ মোড়ে এ তাদেরকে কুকুর কামড়ায় বলে জানান। তারাও সদর হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেওয়ারিশ কুকুরের কামড় খেয়ে গত চার মাসে সেখানে ১৩৭৫ জন টিকা নিতে এসেছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ৪৬৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩২৪, মার্চে ৩১২ ও এপ্রিলে ২৭৫ জন কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অন্যান্য প্রাণির কামড়ে এই চার মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০৯ জন।
এদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। প্রাণির কামড় খাওয়া সবাইকেই দেয়া হয়েছে র্যাবিস টিকা।
সদরের আছাদুর জাহান মধু, সুজয় ইসলাম, সুব্রতসহ কয়েকজন পথচারী জানান, এ বছর কুকুরগুলো অনেক হিংস্র হয়ে উঠেছে। তার ওপর এখন করোনার কারণে বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ থাকায় এগুলো পড়েছে খাদ্য সংকটে। সব মিলিয়ে কুকুরগুলো এখন নিয়ন্ত্রণহীন।
পথচারীরা বলছেন, রাস্তায় বের হওয়া এখন ভয়ের ব্যাপার। সন্ধার পর এগুলো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শিশুরা বেশি ভয় পাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামও জানালেন, আগের মতো এখন কুকুর নিধনের নির্দেশনা নেই। তাদের না মেরে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হচ্ছে।
‘কুকুরের টিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমরা শুধু টেকনিক্যাল সার্পোট (কারিগরি সহায়তা) দিয়ে থাকি।’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন শাফায়াত হোসেন জানান, কুকুরের কামড় খাওয়া রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাবিস ভ্যাকসিন আছে।
কুকুরের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানালেন তিনি।