ভারতে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। আগামীকাল সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। রোববার (২৪ এপ্রিল) টেলিফোনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিশটির বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হয়েছে অক্সিজেনের চরম সংকট। জ্বালানো হচ্ছে গণচিতা। জায়গা মিলছে না হাসপাতালের মর্গে। এমতবস্থায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ধৈর্যের পরীক্ষা চলছে’।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। কেননা ওই দেশটিতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করা উচিত। বন্ধ করতে পারলে ভালো, আর যদি বিভিন্ন কারণে বন্ধ করা না যায়, তাহলে সীমিত আকারে নামিয়ে আনা দরকার। এছাড়াও যারা আসবেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট চারদিকে ৩০০ গুণ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। এজন্য দেশের জনগণকে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র বলেন, ভারতে অসম্ভব রকমের করোনার সংক্রমণ ঘটছে। প্রতিবেশী দেশটিতে যে দুটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে- ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস, তা সারাবিশ্বে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস যেন কোনোভাবেই দেশে আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রচারকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ শেষ হবে। আজ থেকে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে জনগণের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন পরিপূর্ণ সমাধান নয় এবং এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, জনগণকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মুখে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হয়ে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।
সম্প্রতি ভারতের জিনোম বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ চিহ্নিত করেছেন, সেটি নিয়ে উদ্বেগ আছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ডাবল মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে পারে। টিকা তখন কাজ করে না। আর ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়্যান্ট’-এর কথা। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থারও দ্রুত অবনতি ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সাথে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক - তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো লাগাম পরানো না গেলে এবার সংক্রমণের সুনামি ঘটবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে বিধিনিষেধ অব্যহত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকলেও কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে, যদিও তা এখনো উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৬৯৭ জন।
আর ভারতে গত তিন দিনে প্রায় ১০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ । প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬২৪ জন।