Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এসডিজি অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের তাগিদ সংসদ সদস্যবৃন্দের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১, ০৭:৩১ PM
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১, ০৭:৩১ PM

bdmorning Image Preview


২৩ মার্চ, ২০২১ ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব তুলে ধরে; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জনাব জুয়েনা আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেছে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ শীর্ষক সংসদীয় ফোরামের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন, তামাকপণ্যের উপর কর বৃদ্ধি এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যবৃন্দদের উদ্যোগের বিষয়গুলো উঠে আসে। আজ ২৩ মার্চ, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং এর পক্ষে ফোরামটির চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জনাব জুয়েনা আজিজকে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত করেন। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে তিনি মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দের গৃহীত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের সুপারিশসহ নানান উদ্যোগের ব্যাপারে জানান।তিনি বলেন, ‘তামাক পরোক্ষভাবে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করে। পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের একটা বড় অংশ তামাকের কারণে হচ্ছে এবং এর অর্থনৈতিক মূল্য আমাদের জাতীয় অর্থনীতির উপর চাপ তৈরি করছে। সিগারেট এবং তামাকজাত পণ্যের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য সম্পর্ক আছে। এটা নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণকেও পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যামান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করাই সঠিক সমাধান।’ জুয়েনা আজিজ বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সংসদ সদস্যবৃন্দের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘টোব্যাকো নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারে সবাইকে অবগত করতে হবে। এক্ষেত্রে আইন সংশোধন সম্ভব হলে তা করতে হবে। মাননীয় সংসদস সদস্যরা যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আমি মনে করি।’এসময় তিনি তামাকজাত পণ্যে যুক্তিযুক্ত কর বৃদ্ধির ব্যাপারে নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব (এসডিজি) জনাব মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তামাক ও তাজামজাত পণ্যের উপর সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তিনি তামাক চাষীদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং তামাক শিল্পের সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের জন্যেও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তাগিদ দেন।  বৈঠকে ফোরামের সাচিবিক সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ সংশোধিত আইনে যেসব বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন সেদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জানান, যেসব পেশার লোক তামাকের সাথে সম্পৃক্ত, যারা সিগারেট বা বিড়ির দোকানে কাজ করে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। পরোক্ষ ধূমপান বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে হোটেলগুলোতে বা বিভিন্ন জায়গায় যে স্মোকিং জোন আছে সে জায়গাগুলো বন্ধ করতে হবে।

আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে ছয়টি প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো, রয়ছে। ১. ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপান মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; ২. তামাকজাত পণ্য বিক্রয়স্থলে দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে হবে; ৩. তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে; ৪. খুচরা সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ৫. সি-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) এর মতো ক্রমশ বিস্তার লাভ করা পণ্যসমূহের আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ৬. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭% হয় অসংক্রামক রোগজনিত কারণে। এর প্রধানতম কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করে (টোব্যাকো এটলাস, ২০২০)। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অসংক্রামক ব্যধিসমূহ নিয়ন্ত্রণের জন্যও তামাক নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এসডিজিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর করে।  ইতোমধ্যে এসডিজি পূরণে এফসিটিসিকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূলধারার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। বক্তারা ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। 

--

 

 

 

 

 

 

Bootstrap Image Preview