উঠতি অভিনেত্রী আশা চৌধুরী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর থেকে তার মোটরবাইক চালক শামীম আহমেদের বক্তব্য ঘিরে রহস্যের দানা বেঁধেছে। দুর্ঘটনায় তাকে (শামীম) প্রধান অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দারুস সালাম থানায় মামলা করেছে আশার পরিবার।
আশার মৃত্যুর ঘটনার সময়ের হিসাব মিলছে না। প্রথমে গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে ফেরার কথা বলা হলেও পরে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আশা বনানী থেকে রওনা করেছে রাত ১১টার দিকে। ২০ মিনিটের মধ্যে বাসায় ফেরার কথা জানিয়েছিলেন। আশা বাসায় আসছেন ভেবে পরিবারের কেউ আর ফোন দেননি।
রাত প্রায় দুইটার দিকে আশাকে বহন করা মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ অভিনেত্রীর মাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি, একটু টেকনিক্যাল মোড়ে আসেন।’ শামীম ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি আশা আর নেই, মারা গেছে।’ এই তথ্য জানানোর সময় কথা বলতে বলতেই আশার বাবা আবু কালাম কেঁদে ফেলেন। তিনি ফোনটি ধরিয়ে দেন তার শ্যালক মো. দুলাল হোসেনকে।
নিহত আশার মামা দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ পুলিশের সামনে তিন রকম কথা বলেছেন। তাদের ফেরার কথা ছিল কালশী রোড হয়ে কিন্তু টেকনিক্যাল মোড়ে তিনি কীভাবে গেলেন?
এই প্রশ্ন আশার পরিবারের পক্ষ থেকে করা হলে, উত্তরে শামীর জানিয়েছেন তিনি পথ ভুলে গিয়েছিলেন। দুলাল জানান, তার ভাগনি আশার ঢাকার প্রায় সব রাস্তাই চেনা। তাহলে কীভাবে পথ ভুল হলো? তা ছাড়া এই বাইকচালক পুলিশের সামনে বলেছেন, রোড পার হতে গিয়ে আশা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মোটরবাইকে থাকা অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় আশা রাস্তায় পড়ে যান। তার মাথার ওপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে যায়।
দুলাল বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ শামীমই নেশাজাতীয় কিছু খাইয়েছিল আশাকে। কারণ, আশা সুস্থ থাকলে শামীমকে ধরে বসত। আশার রাস্তায় ছিটকে যাওয়ার পর সে আশাকে একবারও ধরে নাই। শামীম আড়াই ঘণ্টা কীভাবে রাস্তায় ঘুরেছে, তার সঠিক উত্তর দিতে পারে নাই। সন্দেহ হওয়ায় তাকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত ট্রাকচালকের নামে মামলাটি করেছি।’
মঙ্গলাবার রাত ৮টার দিকে অভিনেত্রী আশা চৌধুরীকে দাফন করা হয়েছে। পরে ওই দিন রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়।
মামলার বিষয়ে দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার রাতেই আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় বাইকের চালক মো. শামীম আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত শামীম আহমেদ অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর পরিবারের ৬ থেকে ৭ বছরের পরিচিত।
এর আগে মঙ্গলবার ফেসবুকের মাধ্যমে অভিনেত্রী আশার দুর্ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মোড় ঘোরার জন্য আশাদের মোটরসাইকেলটি অপেক্ষা করছিল একটি পিকআপ ভ্যানের পেছনে। এ সময় তাদের পেছন থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেলটিকে। এতে আশা ২০ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে যান।
বাইকচালক অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন। দৌড়ে যান আশার কাছে। গিয়ে দেখেন, ট্রাকটির চাকা ততক্ষণে আশার মুখের কিছু অংশ থেঁতলে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েছে। কিন্তু মোটরবাইক চালক শামীম আশাকে ধরেননি। তাকে কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়। তারা আশাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আশা চৌধুরী রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী ছিলেন। একক নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নাটকেও তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ তিনি রুমান রুনি পরিচালিত ‘দ্য রিভেঞ্জ’ নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন।