Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আন্টি, আশা আর নেই, মারা গেছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:২৭ AM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:২৭ AM

bdmorning Image Preview


উঠতি অভিনেত্রী আশা চৌধুরী গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে এক আত্মীয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঢাকায় ফিরছিলেন।  রাত দেড়টার দিকে দারুস সালাম এলাকায় হঠাৎ একটি ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান আশা।  এমন ঘটনার দৃশ্যটি রেকর্ড হয়ে যায় পেছনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায়। কিন্তু ট্রাকের চাপায় অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় কে দায়ী, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনায় আশাকে বহনকারী মোটরসাইকেলটির চালক ও অজ্ঞাতপরিচয় ট্রাকচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়েরের পর শামীম আহমেদ নামের সেই মোটরসাইকেলচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আশার মৃত্যুর পেছনে তাঁর ‘ভূমিকা’ থাকতে পারে বলে সন্দেহ স্বজনদের। 

গতকাল বুধবার শামীম আহমেদকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালত তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ মামলার এজাহার আদালতে পৌঁছালে বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। 

পুলিশ কর্মকর্তা ও স্বজনরা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠ শামীমের মোটরসাইকেলে আশার গভীর রাতে টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল না। শামীম গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে রূপনগরের বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার দাবি করলেও স্বজনরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানী থেকে আশার বাসায় ফেরার কথা ছিল। শামীম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিন ধরনের তথ্য দিয়েছেন। পেছনে থাকা একটি গাড়ির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ট্রাক মোড় ঘোরার সময় আশা সহজেই ছিটকে ট্রাকের নিচে চলে যান। এভাবে তাঁর মোটরসাইকেলে বসার কথা নয়। এসব কারণে স্বজনরা সন্দেহ করছেন, আশাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানো হয়েছে। ঘটনার আগে দুই ঘণ্টা আশা কোথায় ছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন পরিবারের। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম দাবি করেন, শ্যামলী এলাকায় গিয়ে নাশতা খেয়ে তাঁরা রূপনগরের বাসায় ফিরছিলেন। 

দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার রাতেই আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় মোটরসাইকেলের চালক শামীম আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শামীম আহমেদ অভিনেত্রী আশার পরিবারের ছয় থেকে সাত বছরের পরিচিত। তাঁকে সন্দেহ হওয়ায় পরিবার শামীমসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো চারজনকে আসামি করেছে সড়ক আইনের ১০৫ ধারায়। ট্রাকটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। 

স্বজনরা জানান, শুরুতে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ফেরার কথা বলা হলেও আশার পরিবার পরে নিশ্চিত হয়েছে, বনানী থেকে রওনা হয়েছিলেন আশা। সোমবার রাত ১১টার দিকে আশা তাঁর মাকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি বনানীতে আছেন। ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি বাসায় ফিরবেন। আশার মা-বাবা ধরে নিয়েছিলেন মেয়ে বাসায় ফিরতে হয়তো সাড়ে ১১টা বাজতে পারে। আশার বাবা আবু কালাম বলেন, ফোন করার পাঁচ মিনিট পরে তিনিও আশাকে ফোন দেন। সেই সময় মেয়ের সঙ্গে তাঁদের বোর্ডবাজার এলাকার নতুন বাসার কাজের ব্যাপারে সর্বশেষ কথা হয়। বনানী থেকে তাঁদের ফেরার কথা ছিল কালশী রোড হয়ে আশাদের মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায়। রাত প্রায় ২টার দিকে আশাকে বহন করা শামীম আশার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি, একটু টেকনিক্যাল মোড়ে আসেন।’ শামীম ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি, আশা আর নেই, মারা গেছে।’ 

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ঘটনার সময় আশাদের পেছনে থাকা গাড়িতে বসানো ক্যামেরার একটি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শ্যামলীর দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলটি টেকনিক্যাল মোড়ে মিরপুর ১-এর দিকে যেতে সিগন্যালে একটি ছোট ট্রাকের পেছনে দাঁড়ায়। এ সময় পেছন থেকে একটি বড় ট্রাক সোজা এসে একটু ঘুরিয়ে গাবতলীর দিকে চলে যায়। সেই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল নিয়ে ডান দিকে পড়ে যান শামীম। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে আশা কিভাবে পড়ে গেলেন তা ফুটেজে স্পষ্ট নয়। তবে সামনের অংশের ধাক্কায় তিনি কিছুদূর ছিটকে যান এবং তাঁকে চাপা দিয়ে যায় ট্রাকটি। এতে ট্রাকটি বেপরোয়া চালিয়ে নিজ লেন থেকে ঘুরে অতিক্রম করে আশাকে চাপা দিয়েছে বলে স্পষ্ট দেখা গেছে। তবে আশা মোটরসাইকেল থেকে নেমেছেন বা পড়ে গেছেন, নাকি ধাক্কা দিয়ে তাঁকে টেনে নেওয়া হয়েছে তা পেছনের ফুটেজে স্পষ্ট নয়।  

চার বোনের মধ্যে নিহত আশা চৌধুরী সবার বড়। রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন তিনি। প্রায় চার বছর আগে তিনি অভিনয়জগতে আসেন। নাটকে অভিনয়, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও তিনি বিজ্ঞাপন ও গানের মডেল হয়েছেন।  

Bootstrap Image Preview