Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সীমান্তে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তৎপরতা ঠেকাতে বিএসএফকে অভিযান চালাতে বলেছে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:৫০ PM
আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:৫০ PM

bdmorning Image Preview


‘মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরামের সঙ্গে আমাদের কিছু দুর্গম এলাকা আছে, যেখানে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা আছে। আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে যে অপরাধ করেই সন্ত্রাসীরা সেখানে আশ্রয় নেয়। আবার প্রতিবেশী দেশ থেকেও সেখানে এসে আশ্রয় নেয়। সব কটি বন্ধ করার জন্য আমরা ত্রিমাত্রিক বাহিনী করেছি। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। আমরা বর্ডার সড়ক তৈরি করছি। সেটা হয়ে গেলেই এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) অভিযান চালাতে বলেছে বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আস্তানার তালিকাও বিএসএফকে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ভারতের দেওয়া তালিকা ধরে বাংলাদেশও সীমান্তে সন্ত্রাসীর খোঁজে অভিযান চালিয়েছিল। ( সূত্র: প্রথম আলো)

 

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরের মাল্টিপারপাস শেডে বাহিনীটির ২০২০ সালের বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৯ জনকে পদক দেওয়া হয়। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা, বিজিবির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। আমাদের এলাকা থেকে ধাওয়া দিলে তারা দুর্গম এলাকা পার হয়ে ওই দিকে (ভারতে) চলে যায়। সেটাই যেন না হয় সেজন্য আমরা বিওপির সংখ্যা বাড়াচ্ছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা যতটুকু পারছেন সহযোগিতা করছেন, আমরাও সেটাই করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে থাকেন, আমাদের দেশে এক ইঞ্চি জমিও আমরা কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে দেবো না এবং আমরা সেটাই করছি। তারাও (বিএসএফ) আমাদের এভাবে সহযোগিতা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানেও এমন কিছু এলাকা সম্পর্কে আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ওইসব এলাকা থেকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী চক্র অপরাধ করে চলে যায়। আবার ওইখানে অপরাধ করে আমাদের এখানে এসে শেল্টার নেয়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এসব বন্ধ করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছি। এছাড়া আমরা বর্ডার রোড নির্মাণে জোর দিয়েছি। বর্ডার রোডে হয়ে গেলে এসব সমস্যা আর হবে না।’

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা আছে বলে ভারতের কাছে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম। ভারতে আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্যও ভারতের কাছে অনুরোধ জানান বিজিবি মহাপরিচালক। আস্তানাগুলো ধ্বংসের অনুরোধে বিএসএফ কী জানিয়েছে—সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন।

ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের চমৎকার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মনে করি তাদের যেভাবে আমরা সহযোগিতা করি তারাও আমাদের সেভাবে সহযোগিতা করে। বিশেষ করে চোরাচালান, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে আমাদের দেশে যে রকম স্থান দেই না, আশা করি প্রতিবেশী দেশগুলোও এসব সংগঠনকে স্থান দেবে না এবং দিচ্ছেও না। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং সামনেও কাজ করবে।’

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সম্মেলনে সন্ত্রাসী ক্যাম্পের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি যেখানে যেখানে ক্যাম্প আছে, সেখানে অভিযান চালাতে। তারা আমাদের বলেছে, অভিযান করে তারা আমাদের জানাবে।’ কত স্থানে ক্যাম্প আছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, বেশ কিছু স্থানে সন্ত্রাসী ক্যাম্প আছে।

মহাপরিচালক বলেন, বিজিবিতে দুটি হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র, আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল টেরেইন ভেহিক্যাল, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হাইস্পিড বোট, ইন্টারসেপ্টর বোট, ইউটিলিটি বোটসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’–এর আওতায় আনা হয়েছে।

এ বছর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে ৫৯ জনকে পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ১৯ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা (পিজিবিএমএস) দেওয়া হয়।

Bootstrap Image Preview