Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

১২ বছর গোসল করেননি ‘পীর বাবা’!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:১৮ PM
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:১৮ PM

bdmorning Image Preview


নওগাঁ সদরের দোগাছি গ্রামে অবস্থিত কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া নামীয় দরবার শরিফে চলমান বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী। সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দোগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে দোগাছী ডাঙ্গাপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত এই পীরের খানকা শরীফ। 

গ্রামবাসীর পক্ষে তথাকথিত পীর মৃত আখতারের ছেলে মিজানুর রহমান তার লিখিত অভিযোগে বলেন, বাবা চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মৃত্যু বরণ করেন। বাবা কাদরীয়া ইয়াছিনিয়া দরবার শরিফে একজন পীর ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ সম্পন্ন হয়ে আসছিল। বাবা দীর্ঘ প্রায় এক যুগ গোসল করেননি। তিনি দরবারের ভিতরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার করে দক্ষিণ দিক হয়ে ভক্তি প্রদান করতেন এবং ভিতরের টয়লেট পশ্চিম দিক করে নির্মাণ করে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি সন্তান হিসেবে বাবার এই সব ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের ঘোর বিরোধীতা করেছি। বাবার মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাছরিন আক্তার রাণী ও তার সকল ভক্ত দরবার শরীফে উপস্থিত হয়ে আমার সম্মতি ছাড়াই ইসলামের নিয়ম না মেনে বাবাকে দাফন করেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরো বলেন, আমার বাবার কবরের পাশে তবলা বাজিয়ে বিভিন্ন পুরুষ ও নারী এসে নাচ-গান করেন এবং একে অপরের সঙ্গে নোংরামী করে। এ ছাড়াও বাবা এখনো জীবিত আছে মনে করে কবরের উপরে বিভিন্ন রকমের খাবার রাখা হয়। ইদানিং আমার ছোট ভাই কিবরিয়াও বাবার মতো পীর সাজার চেষ্টা করছে। এসব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তারা।স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, শাহজাহান শেখসহ অনেকেই বলেন এই দরবার শরীফে ইসলামের নামে ভুল ধারণা দিয়ে যুব সমাজ ও অন্যান্য পুরুষ-মহিলাদের মুরিদ দেওয়া হয়। আর এখানকার ভক্তরা হচ্ছে মাদক সেবনকারী দিনমজুর, রিকশা, ভটভটি, ভ্যান চালকসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষ। যারা আখতারের মুরিদ নিয়েছে তারা এখানে এসে রাতে নাচ-গান করে জিকির করে। আমরা গ্রামবাসীরা এই সব ভন্ডদের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে চাই।

মৃত আখতারের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন (৬৫) বলেন, আখতার এক সময় ভালোই ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই পীর হিসেবে নিজেকে জাহির করে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ভালো করতে পারিনি। কিছু মাদকসেবী খারাপ মানুষের সঙ্গে চলাচল শুরু করে। তখন তাকে আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলে সে অন্যত্র বাড়ি করে খানকা শরীফ নামের এক আড্ডাস্থল তৈরি করে।স্থানীয় ইউপি সদস্য আফেলাতুন নেছা বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাতে আখতারের ভক্তরা এই খানকায় আসে আর গাঁজা, মদসহ অন্যান্য মাদক সেবন করে ঢোল বাজিয়ে জিকির করে। তারা কখন কি যে করে তা বলা মুশকিল। আমিসহ স্থানীয়রা এই দরবার শরীফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে বহুবার বলেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাছানুল আল মামুন বলেন, আখতার আমাদের গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জিন থাকা অবস্থায় মসজিদের ঘড়ি চুরি করার পর তাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার ভন্ডামী কর্মকাণ্ড। আমি একাধিকবার চেষ্টা করেছি আখতারের এইসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কিন্তু পারিনি। তাই ভন্ডদের এই দরবার শরীফ উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনের শক্তিশালী পদক্ষেপ খুবই জরুরি।সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই দরবার শরীফ বন্ধ কিংবা উচ্ছেদ করতে হলে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন।

 

 

Bootstrap Image Preview