পাপমুক্ত জীবন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটিকে দ্বিনের অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মূলত মানুষ অপরাধে সম্পৃক্ত হয় লজ্জাস্থান, মুখের কথা ও উদরের কারণে। আর একজন পুণ্যবতী নারীকে সহধর্মিণী হিসেবে পেলে ব্যক্তির অপরাধের সুযোগ কমে যায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুণ্যবতী নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেলে আল্লাহ তাআলা যেন তাকে দ্বিনের একটি অংশ পালনে সহায়তা করল।অতঃপর সে যেন বাকিটুকু পালনের চেষ্টা করে।’ (তাবারানি : ১/২৯৪)
বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো। তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা তৈরি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
অনেকে অসচ্ছলতার কারণে বিয়ে করতে সাহস করে না। অথচ মহান আল্লাহ বিয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বিয়ের পর ব্যক্তির যোগ্যতা ও পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি নিজেকে প্রাচুর্যের অধিকারী করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দাও, এবং তোমাদের সৎকর্মশীল দাস-দাসীদেরও, তারা অভাবগ্রস্ত, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু বকর (রা.) তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘তোমরা বিয়ে করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করো। তিনি তোমাদের দেওয়া অঙ্গীকারও পালন করবেন।’ (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ৮/২৫৮২)
তা ছাড়া আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের মাধ্যমে প্রাচুর্যের অনুসন্ধান করো।’ (জামিউত তাবিল : ১৭/২৭৫)
আল্লাহর নির্দেশ পালনকারীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা থাকে। তিনি তাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহর কর্তব্য। প্রথমজন হলেন আল্লাহর পথে জিহাদ পালনকারী। অতঃপর মুক্তিপণ আদায়ে কাজ করা চুক্তিবদ্ধ দাস এবং পবিত্র জীবনের লক্ষ্যে বিবাহকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৫৫)
মহানবী (সা.) পার্থিব জীবনে ব্যক্তির সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সাফল্যের চাবিকাঠির বর্ণনা দিয়েছেন। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আদমসন্তানের সাফল্যের কারণ তিনটি : সতীসাধ্বী নারী, উপযুক্ত বাসস্থান ও উপযুক্ত বাহন। আদমসন্তানের দুর্ভাগ্যের কারণও তিনটি : মন্দ নারী, অনুপযুক্ত বাসস্থান ও অনুপযুক্ত বাহন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১/১৬৮)
তা ছাড়া হাদিসে সতী নারীদের ইহজগতের সর্বোত্তম উপকরণ বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়া উপভোগের বস্তু। আর সর্বোত্তম উপভোগ্য হলো সতীসাধ্বী নারী।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭)
লজ্জাস্থান ও মুখের কারণে বেশির ভাগ পাপাচার সংঘটিত হয়। আর দুটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে জান্নাতও সুনিশ্চিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমাকে দুই ঊরু ও দুই চিবুকের মধ্যভাগের নিশ্চয়তা দেবে, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১০৯)
তাই সমাজের অপরাধ নির্মূল করতে বিবাহযোগ্য যুবক-যুবতিদের বিয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। নিজেদের পার্থিব উন্নতির পেছনে জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ছেলে-মেয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পরও সমাজের অনেক অভিভাবককে তাদের বিয়ে দিতে দীর্ঘ বিলম্ব করতে দেখা যায়। অথচ এতে তরুণ-তরুণীরা নানা ধরনের অপরাধ ও পঙ্কিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই উন্নত চরিত্রের অধিকারী পরিশ্রমী ও মেধাবী তরুণ-যুবকদের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে দিতে বিলম্ব করা মোটেও উচিত নয়। কারণ পবিত্র জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে কেউ বিয়ে করলে আল্লাহ তাকে প্রাচুর্যের অধিকারী করবেন। আল্লাহ আমাদের সফলকাম করুন। আমিন।