চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়েপড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে সারাবিশ্ব। এখন পর্যন্ত হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন। সীমান্ত বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি চীনের কয়েকটি শহর অচল করে রাখা হয়েছে।
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (মার্স) পর নতুন এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসটি করোনাভাইরাস পরিবারেরই। বছরের শুরু থেকেই করোনা বিয়ার ভাইরাস নিয়ে সার্চ জায়ান্ট গুগলে অনুসন্ধান বেড়ে গেছে।
লোকজন ভেবেছিলেন, জনপ্রিয় মেক্সিকান বিয়ার ‘করোনা এক্সট্রা বিয়ার’ থেকেই ছড়িয়েছে এটি। করোনাভাইরাস নামকরণ মূলত সেখান থেকেই।
গত ১৮ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা বিয়ার ভাইরাস নিয়ে খোঁজ বেড়েছে দুই হাজার ৩০০ শতাংশ। আর বিয়ার ভাইরাস লিখে খোঁজ বেড়ে যায় ৭৪৪ শতাংশ।
আর বিয়ার করোনাভাইরাস লিখে খুঁজেছিলেন ৩২৩৩ শতাংশ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ওই বিয়ার কোম্পানিকে জোর গলায় বলতে হয় যে, ওই ভাইরাসের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
মেক্সিকোর কোম্পানি সের্ভেসেরিয়া মোদেলোর তৈরি এই বিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করে কনস্টেলেশন ব্র্যান্ড।
এই ব্র্যান্ডের পরিচালক ম্যাগি বোমান বলেন, আমরা ভীষণভাবে বিশ্বাস করি, গ্রাহকরা ভালো করেই বোঝেন— আমাদের ব্যবসা এবং ওই ভাইরাসের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
লাতিন ভাষার শব্দ করোনা স্প্যানিশেও রয়েছে। আর করোনা বিয়ারের উৎস মেক্সিকো বলেই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
গ্রাচীন গ্রিক শব্দ করোন থেকে সপ্তদশ শতকের দিকে লাতিনে আসে করোনা শব্দটি। করোন শব্দের অর্থ পুষ্পমাল্য বা পুষ্পমুকুট।
সূর্যের চারপাশে উজ্জ্বল যে আলোর বলয়, সাধারণভাবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময়ই কেবল দেখা যায়, তা ওই মুকুটের মত দেখায় বলে জ্যোতির্বিদরা একেও করোনা বলেন।
আবার ড্যাফোডিলের পাপড়ি বেষ্টনের মাঝে যে অংশটি ট্রাম্পেটের মত বেরিয়ে থাকে, সেটাকেও উদ্ভিদবিজ্ঞানে করোনা বলে।
ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখলে করোনাভাইরাস পরিবারের সব সদস্যের মূল কাঠামো ঘিরে সেইরকম ট্রাম্পেট বা ফানেলের মত অসংখ্য কাঁটা দেখা যায়, যেন রাজমুকুটের উপর থরে থরে সাজানো দণ্ড।
আর এ সব মিলেই এর নাম হয়েছে করোনাভাইরাস, যার সন্ধান মেলে ১৯৩০ এর দশকে।
বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকমে ২০১২ সালের এক নিবন্ধে বলা হয়, মুরগির অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন দেখা দিলে জানা যায় ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস (আইবিভি) এর মূল কারণ।
আর মানুষের দেহে প্রথমবারের মত করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায় ষাটের দশকে।
এদিকে চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলছে, মঙ্গলবার নতুন করে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯০ জনে পৌঁছেছে।
চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি এখনো বিশ্ব মহামারীতে রূপ নেয়নি বলেই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংন্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচও এর মতে, একই সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন, তখনই তাকে বিশ্ব মহামারী বলা যায়। এর সাম্প্রতিক একটি উদাহারণ হচ্ছে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে।
এদিকে এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা না করে যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। এ ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
গত দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা চীন সফর করেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। তার পরই চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করল। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের ফলে বরং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়ার পরিবর্তে বরং আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে প্রথম দেশ, যারা চীনাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল এবং চীন থেকে তাদের দূতাবাসের কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিল।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ, যাদের কিনা মহামারী ঠেকানোর শক্তিশালী ব্যবস্থা আছে, তারাই কিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ না মেনে মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করল।