Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চীন থেকে রাতে দেশে ফিরছে ৩৬১ জন, করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:০৬ PM
আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:০৬ PM

bdmorning Image Preview


চীনের উহান প্রদেশ থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনছে সরকার। দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে। এ সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে পরিবারসহ কেউই দেখা করতে পারবে না।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। 

মন্ত্রী বলেন, চীনে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি মানুষজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া ১৭টি দেশে এ রোগটি ছড়িয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশে এ রোগের কোনো প্রভাব নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সন্দেহজনক একজন ভর্তি রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, সেটা শেষ হলেই বোঝা যাবে। 

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের লড়াই যেন অনেকটা অজানা একটি বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগছে কারা বেশি ঝুঁকিতে, এর লক্ষণগুলো কি কিংবা কীভাবে এটি শরীরে আক্রমন করে।

যেখানে এই ভাইরাসটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সেই চীনের উহানের জিনিনটান হাসপাতালে মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসকরা এখন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেছেন। সেখানে চিকিৎসার জন্য আসা প্রথম ৯৯ জন রোগীর বিশদ বিশ্লেষণ ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

হাসপাতালে নেওয়া ৯৯ জন রোগীর প্রত্যেকেরই নিউমোনিয়া হয়েছিল - তাদের ফুসফুস ফুলে উঠে। কারণ ফুসফুসে যে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ থাকে, যার মধ্যে দিয়ে বাইরের বাতাস থেকে আসা অক্সিজেন রক্তে প্রবাহিত হয়, সেই প্রকোষ্ঠগুলোয় পানি জমে গেছে। অন্যান্য লক্ষণ হল : ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৮২ জনের জ্বর , ৮১ জনের কাশির সমস্যা ও ৩১ জনের শ্বাসকষ্ট ছিল। এছাড়া ১১ জনের পেশির ব্যাথা, ৯ জনের দ্বিধাগ্রস্ততা বা বিভ্রান্তি, আর পাঁচজনের গলায় ব্যাথা ছিল।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে দুইজন রোগী মারা গিয়েছিলেন তারা আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ ছিলেন। তবে তাদের দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের অভ্যাস থাকায় ফুসফুসের কার্যক্রম অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। হাসপাতালে আসার পরে প্রথমে যিনি মারা যান, তিনি ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। গুরুতর নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন তিনি। তার তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়েছিল, এর অর্থ নিজের দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার ফুসফুস, অন্যান্য অঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছিল না। একটি ভেন্টিলেটর লাগানো সত্ত্বেও তার ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে ও হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১১ দিনের মাথায় মারা যান তিনি।


পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বলেন, চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রায় ৩৬১ জন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের অতি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা আমরা করেছি। এখানে যারা ফেরত আসছে আমাদের জানামতে তারা কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তারপরও তারা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তাদের প্রথমে আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখানে তারা ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে। এসময় তারা পরিবারের সদস্যসহ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। পরিবারের সদস্যদের কাছে আমরা নিয়মিত খবরা-খবর পৌঁছে দেব।  

শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট (ডিজি-৭০০১) উহানে থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকেল পাঁচটায় আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট চীনের উদ্দেশ্যে যাবে। আনুমানিক রাত দুইটার মধ্যে তাদের নিয়ে বাংলাদেশে এ ফ্লাইটটি অবতরণ করবে। এই বিমানেও ৫ জন চিকিৎসক থাকবে যারা সম্পূর্ণরূপে প্রটেক্টেড থাকবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের সব সুযোগ-সুবিধাও থাকবে ওই বিমানে। ৩৬১ জনকেও প্রোটেক্টেড অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এমনকি হজ ক্যাম্পে তাদের আলাদাভাবে নিয়ে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে  ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে। 

পর্যবেক্ষণের ১৪ দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের এসে দেখা করতে না চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি অনুরোধ করবো কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইবেন না, তারা কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। 

মারা যাওযা দ্বিতীয় রোগীর বয়স ছিল ৬৯ বছর। তিনিও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। তার শরীরে একটি কৃত্রিম ফুসফুস বা ইসিএমও (এক্সট্রা কর্পোরাল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) মেশিন যুক্ত করা হয়। তবে সেটাও তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। গুরুতর নিউমোনিয়া এবং সেপটিক শক থেকে তার রক্তচাপ অস্বাভাবিক পড়ে। এতে তিনি মারা যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৯জন রোগীর মধ্যে ১১ জন মারা গেছে। এর অর্থ দাঁড়ায় ১১ শতাংশ রোগী মারা গেছে। আর ৩১ জনকে চিকিৎসাশেষে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকি ৫৭ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তারা জানিয়েছেন, এই হিসাবের অর্থ এই নয় যে এই রোগের মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ। কেননা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যে কোন সময় যে কোন কিছু ঘটতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকরা মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, একমাত্র সচেতনতাই এই ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি মেলাতে পারে। তারা বলছেন, এ নিয়ে তীব্র বিভ্রান্তিও ছড়ানো হচ্ছে, যা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কেউ কেউ বলছেন, উহান শহরের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। আবার কেউ বলছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া জীবন্ত প্রাণীগুলো থেকে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গুজবে কান না দিয়ে আক্রান্তদের তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। কেননা দ্রুত চিকিৎসায় দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব। বিবিসি

Bootstrap Image Preview