Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হাবিবুল বাশারকে মুগ্ধ করল সেই আগের মোস্তাফিজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১০ PM
আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১০ PM

bdmorning Image Preview


অনেক কারণে আর সব কিছু মিলে তারই এ মুহুর্তে বাংলাদেশের এক নম্বর পেসার থাকার কথা। আন্তর্জাাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং মানেই যেমন মুশফিকুর রহীম আর তামিম ইকবাল, অলরাউন্ডার বলতেই যেমন সাকিব আল হাসানকে বোঝায়- ঠিক তেমনি পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টের প্রসঙ্গ আসলে মোস্তাফিজুর রহমানের কথা ওঠা উচিত। দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকবোলার হিসেবে কোন দিকে না তাকিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের নামই বলার কথা। মোস্তাফিজ মানেই সব ব্যাটসম্যানের সামনে এক ‘ মূর্তিমান আতঙ্ক’!

কিন্তু কঠিন সত্য হলো, বাস্তব অবস্থাটা মোটেই অমন নয়। হোক তা জাতীয় দলের হয়ে কিংবা দেশের ক্রিকেটে, মোস্তাফিজ আগের মতো আর বল হাতে আগুন ঝরাতে পারছেন না, ঘাম ছুটাতে পারছেন না ব্যাটসম্যানদের।

মাশরাফি ওয়ানডে ছাড়া কোন ফরম্যাট খেলেন না। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটে মোস্তাফিজের বারুদ ঝরানো বোলিং করার কথা। কিন্তু বেশ কিছু দিন হলো, তার বলের বারুদ ফুরিয়ে গেছে। বিশ্বকাপে তার নামের পাশে ২০ উইকেট জমা পড়েছিল। দুই ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারও করেছেন। তারপরও সে বোলিং সাফল্য দলের জন্য কোনই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি। এক ম্যাচেও মোস্তাফিজ ম্যাচ জেতানো বোলিং করতে পারেননি।

বিশেষ করে নতুন বলে একদমই কিছু করতে পারেননি। লাইন-লেন্থ দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। কাটার ধরছিল না। ইয়র্কার ছুড়তে গিয়ে হয়তো ফুলটচ, না হয় ওভার পিচ-হাফ ভলি দিয়ে বার বার মার খাচ্ছিলেন।

বেশি দূর যেতে হবে না। বিশ্বকাপের পর এক ম্যাচেও বোলার মোস্তাফিজ স্বরূপে ফিরতে পারেননি। ভারত সফরে তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সব কটায় প্রচুর মার খেয়েছেন। প্রথম খেলায় ২ ওভারে ১৫ রান দিয়ে উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩.৪ ওভারে ৩৫ রানে উইকেটশূন্য আর শেষ ম্যাচে ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়েও তাই। অর্থাৎ তিন খেলায় ৯.৪ ওভারে ৯২ রানে উইকেটশূন্য।

উইকেট না পাওয়াই শুধু নয়, ওভার পিছু ১০ রানের বেশি দিয়ে ফেলা, রীতিমত চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল। মোস্তাফিজ-ভক্তরা রীতিমত শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন। খোদ প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ভারত সফরের পর জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেছিলেন, ‘মোস্তাফিজকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তার নিজের অনেক কাজ করতে হবে। ফিটনেস বাড়ানোর পাশাপাশি বোলিং নিয়েও কাজ করা দরকার প্রচুর।’

দেখার বিষয় ছিল এবারের বিপিএলে কেমন করেন এ বাঁহাতি পেসার। শুরুতে এখানেও নিজেকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। প্রথম দিন কুমিল্লার বিপক্ষে ৩৭ রানে ২ উইকেট পেলেও মোস্তাফিজকে তার মানের মনে হয়নি। পরের তিন ম্যাচে (০/২১, ১/৩৫ আর ১/১৮, পেয়েছেন ২ উইকেট)।

তবে এরপর নিজেকে কিছুটা ফিরে পেয়েছেন মোস্তাফিজ। কুমিল্লার বিপক্ষে ২৩ রানে ২ উইকেট পান। শেরে বাংলায় ঠিক আগের ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে নেন ৩ উইকেট আর আজ সোমবার আবার সিলেট থান্ডার্সের সাথে ৩ উইকেট।

এই ম্যাচটি আগের ম্যাচগুলো থেকে একটু আলাদা। কেননা শুধু তিন উইকেট শিকার নয়, এদিন একদম মাপা লেন্থ ও নিখুত লাইনে বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। বলের হারিয়ে যাওয়া কারুকাজ যেন ফিরে এসেছে এই ম্যাচে। সব মিলে ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১০ রান।

অনেক দিন পর বলে আগের সেই ধার। সিলেট ব্যাটসম্যানরা একবারের জন্য আক্রমণাত্মক শটস খেলতে পারেননি। মোস্তাফিজ যেন আবার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত, উজ্জ্বল। যা দেখে শুধু ভক্তরা নন। খোদ রংপুর টিম ম্যানেজমেন্ট এবং দলের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার হাবিবুল বাশারেরও মনে ফিরে এসেছে স্বস্তি।

আজ সোমবার খেলা শেষে পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে মোস্তাফিজের বোলিংয়ের উচ্ছসিত প্রশংসাই করলেন জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তার ধারণা, এবারের বিপিএলটা ছিল মোস্তাফিজের কাম ব্যাক মিশন। এখন পর্যন্ত বিশেষ করে শেষ তিন ম্যাচে বাঁহাতি এই পেসার ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। মিশন বিপিএল সফলভাবে শেষ করারও প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে তার বোলিংয়ে।

বাশারের কাছে প্রশ্ন ছিল, কেমন দেখছেন মোস্তাফিজকে? জাতীয় দলের এই নির্বাচকের মূল্যায়ন, মাঝে পেস কমে গিয়েছিল। ইয়র্কার ঠিক হচ্ছিল না। এবারের বিপিএলে শেষ তিন ম্যাচে তার অনেকটাই ফিরে এসেছে।

মোস্তাফিজের ফর্মে ফিরে আসা নিয়ে হাবিবুল বাশারের কথা, ‘খুব ভাল। যে জিনিসগুলো মিসিং ছিল। শেষ তিন খেলায় সেগুলো ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। ইয়র্কারটা ভাল হচ্ছিল না। এখন অনেকটাই তা হচ্ছে। ইয়র্কার, পেস ফিরে আসছে। লেন্থ ও লাইনও ভাল ছিল।’

বাশার যোগ করেন, ‘বিপিএল আসলে মোস্তাফিজের জন্য একটা অন্যরকম প্লাটফর্ম ছিল। তার যা যা করণীয় কাজগুলো ছিল, তা সে করতে পেরেছে। তার স্কিল নিয়ে তো আর কখনই সংশয় ছিল না। আমরা কোন সময়ই মোস্তাফিজের স্কিল, তার মেধা ও সামর্থ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। তবে কাজগুলো ঠিকমত হচ্ছিল না। এবারের বিপিএল যত পরিণতির দিকে যাচ্ছে মোস্তাফিজ ততই সে কাজগুলো গুছিয়ে করছে। সেটাই স্বস্তি। সে প্লাটফর্মটা কাজে লাগিয়েছে। এটা শুধু আমাদের রংপুর বা মোস্তাফিজের জন্যই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও আশার খবর। ছন্দটা ফিরে পেয়েছে এটাই বড় কথা।’

Bootstrap Image Preview