টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাথরঘাটা-তক্তারচালা রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু খোয়াসহ বিটুমিন ব্যবহারেও ব্যাপক কারচুপির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সড়কের পাশে কৃষকের আবাদি জমির মাটি কেটে সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী এ অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদের মারপিট করেছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১২ ফুট প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পাথরঘাটা-তক্তারচালা রাস্তাটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে ব্যয় হবে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ৪২৯ টাকা। রাস্তাটি বাস্তবায়নের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মজিবুর রহমান অ্যান্ড অবনি এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। গত তিন মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার কাজ শুরু করে। রাস্তাটির প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে শুরু থেকে রাস্তার কাজ বাস্তবায়নে অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠে।
বিশেষ করে ইট, বালু ও খোয়া ব্যবহারে। তাছাড়া বিটুমিন ও কার্পেটিংয়ে ব্যাপক কারচুপি করায় এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কিন্ত তারপরও ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার অব্যাহত রাখায় ২৩ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে প্রথমে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীর কয়েকজনকে মারপিট করে আহত করেন।
এ খবর জানাজানি হলে এলাকার লোকজন এসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাজু ও সিহাবকে আটক করে। খবর পেয়ে বাঁশতৈল ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গাজেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা ইজ্জত আলী জনি অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সড়কের পাশে কৃষকের আবাদি জমির মাটি কেটে সড়কে ব্যবহার করছে।
খলিয়াজানী গ্রামের বাসিন্দা দীপক দাস, অধীর শীল, কার্তিক শীল প্রমুখরা অভিযোগ করেন বলেন, চোখের সামনে উন্নয়ন কাজে এত অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
কাজে অনিয়মের কথা বলায় ঠিকাদারের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে উল্লেখ করে একই গ্রামের সুশীল দাস, ভজন মালু, প্রেমা সরকার বলেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে ঠিকাদার আমাদের আবাদকরা সরিষাক্ষেতের মাটি কেটে নিয়েছে। বাধা দিলে মামলার ভয় দেখায় বলে তারা জানান। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুই ম্যানেজার রাজু ও সিহাবের বিচার দাবি করেন।
মির্জাপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিফুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটিতে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৈয়দ মজিবুর রহমান অ্যান্ড অবনি এন্টারপ্রাইজের (জেভি) ঠিকাদার হিকমত মিয়া রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন, সোমবার এলাকাবাসী এবং তার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা অপ্রত্যাশিত।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার শুরুতে নিয়মমাফিক কাজ করলেও গত কয়েকদিন আমি অসুস্থ থাকার সুযোগে নিম্নমানের কাজ করছে বলে জানতে পেরেছি। সরেজমিনে কাজটি দেখে যেখানে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে সেখানে প্রয়োজনে পুনরায় কাজ করানো হবে বলে তিনি দাবি করেন।