Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‌মাইরের উপর ঔষধ নাই, ইউএনও’র স্ট্যাটাসে সমালোচনার ঝড়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ PM
আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সুধীমহলে।

বন্দর উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লা সম্প্রতি ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে লেখা একটি স্ট্যাটাসে ‘মাইরের উপরে ঔষধ নাই’ এমন মন্তব্যকে সরকারের নীতি বহির্ভূত মত বলে মনে করছেন জেলার বিশিষ্টজনরা।

ইতোমধ্যে তার ওই স্ট্যাটাসের লেখাটি শেয়ার করেছে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। এতে শত শত মানুষ কমেন্ট করে সমালোচনা করছেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর ইউএনও'র স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সরকার যেখানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মারধরের বিপক্ষে সেখানে ইএনও’র এই ধরণের স্ট্যাটাস সরকারের বিপক্ষে অবস্থান বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্টজনরা।

পাঠকদের অবগতির জন্য ইউএনও' ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

"গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রী আসছে, এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় সবাই দুইয়ের অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য।আবদার আমি যেন তাদের পাশ করে দেবার সুপারিশ করি।তাদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা ফেল করলো, ছাত্রছাত্রীদের ভাষ্য - এই একটু সমস্যা ছিল। কি সমস্যা খোলাসা করে বলে না । বেশিরভাগ মা বাবা বলল তাদের সন্তানরা পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল। অসুস্থতার ধরন জিজ্ঞেস করলে বলে সবার জ্বর ছিল।কেউ কেউ বলল কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নাই তাই ফেল করিয়েছে।কোন কোন মা বলল তাদের সংসারে অশান্তি ,ছেলে পড়তে পারেনি।একজন ছাত্র বলল প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে ঢুকতে দেয় না, চুলে আর্মি কাট দিতে বলে এবং খুব আশ্চর্য লাগলো ছেলের মাও একই বিষয়ে অভিযোগ করছে ! জিজ্ঞেস করলাম এইচএসসি র পূর্নরুপ কি ? মাশাল্লাহ কেউই বলতে পারলো না।"

"ওহো এর মধ্যে আবার সরকারি স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া ছেলেমেয়েদের বাবা মা আছেন ।আজ একজন বাবা তার মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পেরোনো ছেলের সামনে বলছেন, ম্যাডাম আমার ছেলে বলে দিছে সে যদি এই স্কুলে না ভর্তি হতে পারে তাহলে আর লেখাপড়াই করবে না ! শাব্বাস বাপ বেটা ! শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের মনে কেন এত মায়া, মায়ার বশে আপনারা পরীক্ষার হলে বাচ্চাদের কথা বলতে দেন। তারা একজন আর একজনের দেখে লিখলেও আপনারা তা দেখেন না ।এখনো কেন শুনতে হয়, এই চুপ কর, ম্যাজিস্ট্রেট আসছে। আপনারা মনে করেন বাচ্চাগুলা পাশ করুক, ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষার হলে সুযোগ দিয়ে কেন? কেন আপনাদের শুনতে হবে আপনাদের কাছে না পড়লে আপনারা ফেল করায় দেন।আপনারা কি ভাবেন এতে করে বাচ্চাগুলার উপকার হচ্ছে,তারা আপনাদের মনে রাখবে ? একটা সময়ে এরাই আপনাকে অসম্মান করবে,পাত্তাই দেবে না।"

"প্রিয় বাবা মা, আপনি আপনার সন্তানের সামনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, শিক্ষককে ছোট করছেন, আপনার সন্তান আর কদিন পর আপনাকে সম্মান করবে তো ! সন্তান ফেল করলে/ চান্স না পেলে সব শিক্ষকের দোষ। প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সিস্টেম ভাল না, টাকা খেয়েছে ব্লা ব্লা। কোনো শিক্ষকের কি এই সাধ্য আছে যে খাতায় লেখার পরও তাকে ফেল করায় দেয়! যে বাচ্চাটা ইংরেজিতে তিন /তের পেয়েছে তাকে কিভাবে তেত্রিশ করবে ! বাচ্চাকে শখ করে, আদরের আতিশয্যে, আধুনিকতার সংস্পর্শে আইফোন কিনে দিলেন, বাইক কিনে দিলেন। কিন্তু সে আদৌ স্কুলে/কলেজে যায় কিনা কয়দিন খোঁজ নিয়েছেন। সে কার সাথে চলাফেরা করে খোঁজ নিয়েছেন শেষ কবে? কবে সে অন্য কাউকে খুব ছোট্ট কাজে ধন্যবাদ বলেছে? আচ্ছা সে কি কখনও তার স্কুলের দপ্তরী কে সালাম দিয়েছে? সে কি স্কুলের মাঠ যে ঝাড়ু দেয় তাকে থ্যাংকু বলেছে? সে যে রিকশায় আসা যাওয়া করে তাকে কোনেদিন থ্যাংকু বলেছে?" "সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন : মাইরের উপর ঔষধ নাই !"

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রদের মারধর করা সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কারণ সরকার শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করার বিপক্ষে। ফলে ইউএনও’র কথা সরকারের নীতির বিপক্ষে।

তিনি বলেন, আমাদের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের যথেষ্ঠ অবহেলা রয়েছে। সেসব অস্বীকার করার উপায় নেই। অভিভাবকদেরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

তবে একজন ইউএনও একথা বলতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বিষয়টি তদন্তসহ ইউএনও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

বিশিষ্ট কবি আরিফ বুলবুল বলেন, সংবিধানে ‘মাইরের উপরে ঔষধ নাই’ এমন কোনও কথা নেই। ইউএনও রাষ্ট্রের অংশ। সে একথা লিখতে পারে না। বাচ্চাদের মারার কারণে অনেক শিক্ষকের শাস্তিও হয়েছে। সেখানে ইউএনও শিশুদের মারার পক্ষে কিভাবে কথা বলে আমি জানি না।

তিনি বলেন, অনেক পরিবারেই অনেক অশান্তি রয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সব অভিযোগই মিথ্যা না-ও হতে পারে। কিন্তু ইউএনও’র লেখায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নেই। বরং এক ধরণের অবজ্ঞা রয়েছে। তবে তিনি ঝাড়ুদারের সাথে, রিকশাচালকের সাথে যে আচরনের কথা বলেছেন সেগুলি সঠিক। সেসব ভালো আচরন বাচ্চাদের করা উচিৎ। তবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটিই ত্রুটিপূর্ন।

তবে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বন্দর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা জাফর সরকার শুক্লা জানান, মূলত ছেলে-মেয়েদের অন্যায্য আবদার নিয়ে যে সকল অভিভাবকরা আসেন তাদের উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে স্ট্যাটাসটি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অভিভবক ও শিক্ষকদের সচেতন করতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পাঠদান ও ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমার এই লেখাটি। তবে এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারি দফতরের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

Bootstrap Image Preview