Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাসুল (সা.)-এর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট মানুষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২৪ AM
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২৪ AM

bdmorning Image Preview


বাংলা ভাষায় একটি ভাবসম্প্রসারণ আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, তাদের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সান্নিধ্যে আসতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির চিন্তা, বিশ্বাসপ্রবণতা তার ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে টেলিপ্যাথি বলে। টেলিপ্যাথি হচ্ছে, এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে বার্তা প্রেরণের মাধ্যম। যেখানে কোনো সাধারণ মাধ্যম অথবা শরীরের বাহ্যিক অঙ্গ ব্যবহার করা হয় না। এটি সাধারণত মনের ক্ষমতা ব্যবহার করে হয়ে থাকে। এটি মনের সঙ্গে মনের যোগাযোগের মাধ্যম।

মানুষ সৎ মনের সঙ্গে উঠাবসা করলে, তার মনের যোগাযোগও হবে একটি স্বচ্ছ মনের সঙ্গে। আর অসৎ লোকদের সঙ্গে উঠাবসা করলে তার মনের যোগাযোগ হবে একটি অন্ধকার মনের সঙ্গে। যার প্রভাবে তার মনেও আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসতে পারে।রাসুল (সা.) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হলো কস্তুরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও কামারের হাপরের মতো। মৃগ কস্তুরী বহনকারী হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি লাভ করবে সুবাস।

আর কামারের হাপর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে পাবে দুর্গন্ধ। (বুখারি, হাদিস : ৫১৩৬)তাই জীবনে বন্ধু চয়নের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। নিকৃষ্ট মানুষ থেকে দূরে থাকা জরুরি। রাসুল (সা.)-এর হাদিসে কিছু মানুষকে নিকৃষ্ট মানুষ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুুষ আছে, যাদের মধ্যে একই ধরনের অভ্যাস পাওয়া যায়। আমাদের উচিত তাদের থেকে দূরে থাকা।

দুমুখো মানুষ : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মানুষের মধ্যে দুই রূপধারী লোক সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে এ দলের নিকট আসে এক রূপ নিয়ে এবং অন্য দলের নিকট আসে অন্য আরেক রূপ নিয়ে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫২৪)। এ ধরনের মানুষ আমাদের চারপাশে অনেক পাওয়া যায়, যারা আমাদের বন্ধুর বেশে ক্ষতি করে বেড়ায়। এদের থেকে দূরে থাকা উচিত।

যাদের অনিষ্টের ভয়ে মানুষ তাদের থেকে দূরে থাকে : আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যায়, যাদের অনিষ্টের ভয়ে তাদের নিকটাত্মীয়রাও তাদের থেকে দূরে সরে থাকে। রাসুল (সা.) এদের থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও।

সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান। অথবা বললেন, সে তার গোত্রের ঘৃণ্যতম ভাই। যখন সে প্রবেশ করল, তখন তিনি তার সঙ্গে নম্রভাবে কথাবার্তা বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন। তিনি বললেন, হে আয়েশা! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অশালীন ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংসর্গ বর্জন করে চলে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩১)

অনেকে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য পরিবার কিংবা সমাজের মানুষের সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করে। মানুষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে যারা সম্মান আদায় করতে চায়, তাদের মূল অবস্থান উপরোক্ত হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে। তাই প্রভাব বিস্তারের জন্যও এমনটি করা উচিত নয়।

ইলম অনুযায়ী আমল না করা : আর নিকৃষ্ট পাপাচারী ব্যক্তি, যে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, কিন্তু পাপের কাজে কোনো পরোয়া করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৬)। মুসলমান হিসেবে আমরা সবাই কমবেশি কোরআন শিখি। হালাল-হারামের বেশির ভাগ বিষয়েই আমরা স্পষ্ট ধারণা রাখি। তবু পার্থিব স্বার্থে অনেক সময় আমরা তার তোয়াক্কা করি না। রাসুল (সা.) এমন লোকদের নিকৃষ্ট বলেছেন। তাই আমাদের নিজেদেরও এমন অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। যারা এমনটি করে তাদের থেকে দূরে থাকা উচিত।

যারা সব ক্ষেত্রে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় : আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অপরের পার্থিব স্বার্থে আখিরাত বরবাদ করেছে, কিয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৬৬)মানুষ যদি দুনিয়ার ওপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিত, তবে পৃথিবীতে সুদখোর, ঘুষখোর, ধর্ষক, সন্ত্রাসী কিছুই থাকত না। তাই আমাদের উচিত, জীবনের সব ক্ষেত্রে আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহকে ভয় করা। যারা আখিরাতবিমুখ ও অন্যদের আখিরাত থেকে বিমুখ করার পাঁয়তারা করে, তাদের থেকে দূরে থাকা।

Bootstrap Image Preview